দুর্গাপূজার আগেই ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ

Posted on September 11, 2025

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: আসন্ন ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে স্বরদীয়া দুর্গাউৎসব। দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এই অনুমোদন শর্তসাপেক্ষ। বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে কলকাতা দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। এই বন্দর দিয়ে দ্রুত ইলিশ মাছ কলকাতা মাছের আড়তে পৌছাইতে ২ ঘন্টা সময় লাগে। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই এই খবরে খুশি। কারণ প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় রাজ্যে ইলিশের চাহিদা স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হয় না।

পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয়ভাবে ইলিশ ধরা হলেও তা রাজ্যের বিশাল চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। তাই প্রতি বছর গুজরাট বা মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজার আগে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশেষ অনুমতি চাইতেন যাতে সময়মতো ইলিশ পৌঁছে এবং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে।

এবারও সেই আবেদন মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য রপ্তানির সঙ্গে কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নীতিগতভাবে ভারতে ১,২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এক স্থানীয় বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসছে, এটি খুবই ভালো খবর। আমরা ইলিশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ আমদানিকারক সৈয়দ আনোয়ার মোকসেদ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দুই বাংলার সেতুবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।”

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সরকার স্থানীয় চাহিদার কথা বিবেচনা করে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করেছিল। তবে ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে পশ্চিমবঙ্গে আবার ইলিশ পাঠানো শুরু হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দুই বাংলার ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগ্রহী রপ্তানিকারকরা ১১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে হার্ড কপিতে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে থাকতে হবে— হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর ও ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র, মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স। প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫ মার্কিন ডলার। যারা পূর্বে আবেদন করেছেন, তাদেরকেও নতুন করে আবেদন জমা দিতে হবে।

গত বছর দুর্গাপূজার জন্য অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩,০০০ মেট্রিক টন, যা পরে কমিয়ে ২,৪২০ মেট্রিক টন করা হয়। এবারের অনুমোদিত পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গে কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও বড় সুযোগ। মিষ্টি, প্রসাদ, ও নানা পণ্যের সঙ্গে ইলিশের চাহিদা বেড়ে যায়। বাংলাদেশি ইলিশ রপ্তানি ঠিকমতো হলে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং উৎসবের সময় ইলিশের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে।

এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক। শুধু ব্যবসায়িক নয়, দুই বাংলার মানুষও এটিকে সেতুবন্ধনের অংশ হিসেবে দেখছেন। দুর্গাপূজার আগেই এই সংবাদ ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে।