জাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

Posted on September 11, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র ও ১০টি ছাত্রী হলের ২১টি কেন্দ্রে মোট ২২৪টি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্সগুলো সিলগালা করেন।

জাকসুর ইতিহাসে এ প্রথম বারের মতো নির্বাচনে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) প্রযুক্তি-ভিত্তিক ব্যালট ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে টিক চিহ্ন (✓) দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ২৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ প্রার্থী। এরমধ্যে ভিপি পদে ৯ জন এবং জিএস পদে লড়ছেন ৮ জন। সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে মোট ভোটার ২১ হাজার ৭৫৯ জন।

এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলিয়ে মোট ৮টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরমধ্যে রয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, বাগছাসের ‘সম্মিলিত ঐক্য ফোরাম’, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের পৃথক প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ ও ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ ছাড়াও আরও তিনটি স্বতন্ত্র প্যানেল।

নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত আরিফুজ্জামান উজ্জল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু, ছাত্রদলের শেখ সাদী হাসান ও শিবির সমর্থিত প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আলোচনায় আছেন শিবির সমর্থিত মাজহারুল ইসলাম, ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী এবং বাগছাস সমর্থিত তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করেন, উৎসবমুখর পরিবেশে এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে ৬৭ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন এবং একই সংখ্যক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহকারী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ভোট গণনা করা হবে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে দেড় হাজার পুলিশ সদস্য, সাত প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পাঁচ প্লাটুন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাহিরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মোতায়েন রাখা রয়েছে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দেয়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেন হলের গেট ও প্রান্তিক গেট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে।

এছাড়া, পুরনো পরিবহন এলাকার টারজান পয়েন্ট, নতুন কলা ভবনের পাশে মুরাদ চত্বর, প্রান্তিকের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও প্রধান ফটকের আশপাশের অস্থায়ী দোকানপাট আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

তবে, হলের ক্যান্টিন ও ভেতরের দোকান খোলা থাকবে, পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেটের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেয়া হবে।