ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ১২৫, সর্বোচ্চ ১৭২৫ টাকা

Posted on November 13, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আগামী এক ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল। এদিকে সদ্য উদ্বোধন হওয়া রুটটির ভাড়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে দেখা গেছে সর্বনিম্ন ১২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭২৫ টাকায় ভ্রমণ করা যাবে সাগরিকায়।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) রেলের সূত্র ভাড়ার বিষয়টি জানালেও কোন কোন ট্রেন যাত্রা করবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এর আগেই দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন এই রেলপথের মধ্যবর্তী ১১টি স্টেশনের ভাড়া অনুমোদন করেছে রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ।

ভাড়ার ওই তালিকায় দেখা যায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া হবে (নন এসি মেইল ট্রেনে) ১২৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ওই ট্রেনের এসি বার্থে জনপ্রতি ১ হাজার ৭২৫টাকা।

বর্তমানে ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারের জন্য এসি শ্রেণির নির্ধারিত ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা এবং নন এসি শ্রেণির জন্য ১ টাকা ১৭ পয়সা। তবে দেশে চালু থাকা লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর এই চার রকম ট্রেনের জন্য ভাড়ার হারে কিছুটা তারতম্য আছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ৫৩৫ কিলোমিটারের এ পথে লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৫ টাকা। মেইল ট্রেনে এই ভাড়া হবে ১৭০ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনের ক্ষেত্রে ২১০টাকা। এ ছাড়া সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ২৫০ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫০০ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ৬৭০ টাকা। আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকিট ১০০০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৯৬১ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১১৫০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ১৭২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথের বাণিজ্যিক দূরত্ব ১৮৯ কিলোমিটার। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে এখন পর্যটন নগরী কক্সবাজার যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া পড়বে ৫৫ টাকা, আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। মেইল ট্রেনে এই ভাড়া হবে ৭০ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনের ক্ষেত্রে ৮৫টাকা। এ ছাড়া সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ১০৫ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ২৭০ টাকা। আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকিট ৪৬৬ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৪৬৬ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৬৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পথে লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ১৫০ টাকা। ইসলামাবাদ থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ১৫০ টাকা। দুলাহাজরা থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ২০২ টাকা।

চকরিয়া থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ২৭১ টাকা। হারবাং থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। এসি বার্থে সর্বোচ্চ ৩৬৮ টাকা। লোহাগড়া থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ৪২৬ টাকা। সাতকানিয়া থেকে কক্সবাজার (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ৪৭৮ টাকা।

নতুন নির্মিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩৯ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেনে অতিক্রম করতে লোকাল ট্রেনের ভাড়া পড়বে মাত্র ৪০ টাকা। মেইল ট্রেনে তা ৫৫ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনে সেই ভাড়া ৬৫ টাকা।

সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ৮০ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৩০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ১৫৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ২৩৬ টাকা।

আর দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকিট ৩৫৭ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ২৯৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৩৫৭ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৫৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের নান্দনিক রেলস্টেশন এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেছেন।

সেদিনই জানানো হয়, ডিসেম্বরেই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলবে ট্রেন। আজ ট্রেনের ভাড়া এবং চলাচল শুরুর নির্দিষ্ট দিন জানা গেলো।

দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে।

১৫টি বগি নিয়ে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় এই ট্রেনে আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭টি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা নতুন আধুনিক কোচ দিয়ে লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয়েছে ট্রেনটি।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

মেগা প্রকল্প হিসেবে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে টেন্ডার হলে দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনসট্রাকশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পায়।