বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

Posted on July 22, 2025

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজধানীর দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরসহ এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। নিহত সবার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে আরও ১৬৫ জন। এ পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা— কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮ জন; জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন ১০, চিকিৎসাধীন ৪৬ জন; ঢাকা মেডিকেল মারা গেছেন ১ জন, চিকিৎসাধীন ৩ জন; ঢাকা সিএমএইচে মারা গেছেন ১৬ জন, চিকিৎসাধীন ২৮ জন; উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে মারা গেছেন ২ জন, চিকিৎসাধীন ১৩ জন; উত্তরা আধুনিক হসপিটালে মারা গেছেন ১ জন, চিকিৎসাধীন ৬০ জন; উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ জন; শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ জন; ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছেন ১ জন, চিকিৎসাধীন ২ জন; কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জন। মোট নিহত ৩১ জন, আহত ১৬৫।

এর আগে আজ সকালে জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

তিনি জানান, নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু, বাকি দুইজনের মধ্যে একজন পাইলট, অপরজন শিক্ষিকা। এ পর্যন্ত ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এছাড়া বার্ন ইউনিটে দুইজন ভেন্টিলেশনে আছে।

তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন, সিএমএইচ-এ ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেলে ১ জন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একটি দেহাবশেষ রয়েছে। তবে সেটি কোন ব্যক্তির মরদেহ নাকি অন্য কোনো মরদেহের অংশ তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর বলেন, ২৭টি লাশের মধ্যে ২০টি লাশ ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৬টি লাশ এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে থাকা দেহাবশেষটি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সেগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) রাতে আইএসপিআর জানায়, ঢাকার ৮টি হাসপাতাল থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জন এবং আহতের সংখ্যা হয়েছে ১৭১ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন ৭০ জন এবং মারা গেছেন দুজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি তিনজন ও মারা গেছেন একজন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭ জন ও মারা গেছেন ১২ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে একজন ভর্তি এবং মারা গেছেন দুজন। উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন ভর্তি এবং মৃত্যু হয়েছে দুজনের। উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন চিকিৎসাধীন এবং একজন মারা গেছেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আটজন আহত ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উল্লেখ্য, রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পরপরই দুপুর সোয়া ১টার দিকে উত্তরার মাইলস্টোনে স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে এবং আজকের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।