‘রাজসাক্ষী হয়ে সত্য প্রকাশের শর্তে সাবেক আইজিপিকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে’

Posted on July 12, 2025

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে সম্মত হওয়ায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

শনিবার (১২ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল দুই পৃষ্ঠার লিখিত আদেশ প্রকাশ করে। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মহিতুল হক এনাম চৌদুরী।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, মামুনের আইনজীবী রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল মনে করে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যদি অপরাধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করে এবং প্রধান অভিযুক্ত ও সহযোগী অভিযুক্তের অপরাধ সম্পর্কে তার জানা সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করে তখন ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।

শর্ত অনুযায়ী, তাকে নিজের ও তার সঙ্গীদের অপরাধের বিষয় ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে কারাগারে অন্য বন্দিদের সঙ্গে না রেখে আলাদা জায়গায় রাখতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত দুই পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলার নম্বর আইসিটি-বিডি কেস নং ০২/২০২৫ (আইসিটি-বিডি বিবিধ মামলা নং ০২/২০২৪ থেকে উদ্ভূত)। ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন, তবে বাকি দুই অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন।

রায়ে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের পর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি দোষ স্বীকার করেন নাকি অস্বীকার করেন? জবাবে তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং জানান, তিনি অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পরিস্থিতি এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রধান বা সহযোগী হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির বিষয়ে সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালের কাছে আসামিকে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য একটি আবেদন করেন। প্রধান প্রসিকিউটর এই শর্তে ক্ষমা প্রদর্শনে সম্মতি জানান, যদি তার এই তথ্য প্রকাশ অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক হয়।

ট্রাইব্যুনাল বিদ্যমান তথ্য ও পরিস্থিতির ভিত্তিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে এই শর্তে ক্ষমা করা হয়, তিনি অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পরিস্থিতি এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রধান বা সহযোগী হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রকাশ করবেন। তিনি এই শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা গ্রহণ করেন। এর ফলে ট্রাইব্যুনাল সুবিধাজনক তারিখে তাকে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষার জন্য ডাকবেন।

যেহেতু অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন, তাই তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখা প্রয়োজন। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখা হয়।

এই আদেশের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে এবং এই আদেশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করে শেখ হাসিনার মামলায় রাজসাক্ষী হন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ঐদিন তিনি ট্রাইব্যুনালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্য বলেন, জুলাই আগস্টের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের বিস্তারিত তুলে ধরতে চান তিনি। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।