কুয়াকাটা পৌরসভার দরপত্রে কারসাজি: অপরিকল্পিত কাজের সিদ্ধান্তে সাগরে বিলীন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা

Posted on July 12, 2025

পটুয়াখালী প্রতিনিধি।। সরকার পরিবর্তনের পরও কুয়াকাটা পৌরসভায় প্রকৌশল বিভাগের অনিয়ম থামছে না। খোদ পৌরসভার ভেতরেই গড়ে উঠেছে প্রকৌশলীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রভাবে দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ পাচ্ছেন না অনেক ঠিকাদার, অন্যদিকে রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব এবং জনস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটছে।অপরিকল্পিত কাজের সিদ্ধান্তে সাগরের বিলীন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

পৌরসভার বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমান এবং সদস্য সচিব উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুজনের বিরুদ্ধে উঠেছে নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রকল্পে বাহ্যিকভাবে কাজ ভালো দেখালেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ।

ঠিকাদার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে আহবান করা একটি দরপত্রে (আইডি: ১০০৪২৫৪) সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই পিপিআর বিধান লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় দরদাতাকে কাজটি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ তিনি পৌর প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো জবাব পাননি।

বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকার একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কার্যাদেশ ইস্যু করা হয় ১৫ নভেম্বর ২০২৪। তবে মেয়াদ শেষ হতে চললেও আজও প্রকল্পটির ভৌত বা আর্থিক অগ্রগতি ০ শতাংশ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪৪০ মিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ২০০-২৫০ মিটার এলাকায় ইট ফেলা হয়েছে; কাজের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

স্থানীয়দের দাবি, যেখান থেকে সড়কটি শুরু হয়েছে তা প্রয়োজনীয় এলাকার বাইরে, বর্ষায় তা সহজেই নষ্ট হতে পারে। মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পেও ঘটেছে একই অনিয়ম। উদ্বোধনের আগেই গত ২৯ মে সমুদ্রের জোয়ারে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক ভেঙে পড়ে, যার নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমান এর আগেও পটুয়াখালী পৌরসভায় দায়িত্ব পালনের সময় অডিটোরিয়াম নির্মাণে অতিরিক্ত বিল অনুমোদনের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়ান। বিষয়টি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুন ক্লোজিং শেষে মো. নিয়াজুর রহমান ও মো. সুজন বদলির জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের আশঙ্কা, তাদের এই সিন্ডিকেটের কারণে পূর্বের ফেলে রাখা কাজগুলোও নিম্নমানের হবে এবং সরকারি অর্থের অপচয় ঘটবে।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমান বলেন, “সর্বনিম্ন দরদাতার কাগজপত্র ঠিক না থাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর একটি দুর্নীতির মামলায় আমি ৫ নম্বর আসামি—সাজা হলে আগে অন্যদের হবে।”

এদিকে প্রকল্পের বর্তমান ঠিকাদার মো. জাফর জানান, “গাইড ওয়ালসহ কিছু কাজ হয়েছে। রাস্তার মাঝে একটি কালভার্ট, ব্লক ও জিও ব্যাগ দরকার। এসব ছাড়া রাস্তা এক বছরের মধ্যেই সাগরে চলে যাবে, তখন আমার জামানত আটকে যাবে।”

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসিন সাদেক বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই অভিযোগ এসেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”