৯ মাস ধরে ফ্ল্যাটের ভিতরেই পড়ে ছিলো অভিনেত্রীর মরদেহ!

Posted on July 12, 2025

বিনোদন ডেস্ক : পাকিস্তানের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর আলীর মরদেহ করাচির একটি ফ্ল্যাট থেকে ৯ মাস পর উদ্ধার করা পুলিশ। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২৪-এর অক্টোবর মাসে অভিনেত্রী হুমায়রার মৃত্যু হয়।চলতি বছরের ৮ জুলাই প্রায় নয় মাস পর তাঁর ফ্ল্যাট থেকে একেবারে পচাগলা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধারের পর হুমায়রারমরদেহ এতটাই পচন ধরে গিয়েছিল যে, মৃতদেহ চিহ্নিত করা তদন্তকারীদের পক্ষে দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডিআইজি সৈয়দ আসাদ রেজা জানিয়েছেন, হুমায়রার কলরেকর্ডে তার শেষ ফোন কল ২০২৪-এর অক্টোবরে পাওয়া গিয়েছে। এমনকী তার প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, অভিনেত্রীকে শেষবার গত বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে দেখা গিয়েছে। কয়েক মাস আগেই অভিনেত্রী পরিবার, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বাইরের জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৮ সালে হুমায়রা ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া এসেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তিনি ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন। যার ফলে বাড়িওয়ালা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ক্লিফটনে (সিবিসি) অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এবং তাঁর ফ্ল্যাটের বিদ্যুত্‍ কেটে দেয়। এমনকী অভিনেত্রীর ঘরে কোনও মোমবাতি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুমায়রার ফ্ল্যাটের সমস্ত খাবার পচে গিয়েছিল এবং কৌটো গুলোতে মরচে ধরেছিল।

এত মাস কেন কেউ বুঝতে পারেনি?
জানা গিয়েছে, ওই ফ্লোরে অন্য একটি ফ্ল্যাট ছিল যা ফাঁকা ছিল। তাই প্রতিবেশীদের নাকে কোনও গন্ধ আসেনি। যদিও ফেব্রুয়ারি ওই ফাঁকা ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ফিরে এলে গন্ধ ততদিনে প্রায় চলে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, হুমায়রার ফ্ল্যাটের বারান্দার দরজা খোলা ছিল। এই কারণেই এত মাস ধরে কারোর নাকে কোনও গন্ধ আসেনি।

মৃত্যুর খবর কীভাবে সামনে আসে?
দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ার কারণে হুমায়রার বাড়িওয়ালা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যার তদন্তে পুলিশ এসে হাজির হয় হুমায়রার ফ্ল্যাটে। দরজার কড়া নাড়লে, কেউ সাড়া না দেওয়ায় পুলিশ দরজা ভেঙে ঢোকে। এবং অভিনেত্রীর পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করে।

অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর পর তার বাবা ডাঃ আসগর আলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, মেয়ের সঙ্গে তারা অনেক আগেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তাই তার মৃতদেহ নিয়ে তারা গ্রহণ করবেন না।

তবে এখন হুমায়রা ভাই নাভিদ আসগর, যিনি লাহোর থেকে এসে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বোনের মরদেহ গ্রহণ করেন, সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করিনি। আমাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল, তবে তা মানে এই নয় যে আমরা তাকে ত্যাগ করেছি। গত তিন দিন ধরে আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মরদেহ বুঝে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার বাবার কিছু কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনা জানতে চাই তদন্ত যেন স্বচ্ছ হয়।

নাভিদ জানান, হুমায়রা প্রায় সাত বছর আগে লাহোর থেকে করাচি চলে আসেন এবং পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। মাঝেমধ্যে দেখা করলেও, গত দেড় বছর ধরে তিনি একেবারেই বাড়ি আসেননি।

তিনি আরও জানান, পারিবারিক এক আত্মীয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং বাবার মানসিক অবস্থার অবনতির কারণে তারা সময়মতো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেননি। নাভিদ গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, মিডিয়া যেন অনুমানের ভিত্তিতে খবর না বানিয়ে, প্রকৃত প্রশ্ন তোলে। যেমন বাড়ির মালিক কেন হুমায়রার খোঁজ নেননি? দরজা কীভাবে খোলা হলো? সিসিটিভি কেন ছিল না? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি জানান, গত এক বছরে পরিবার একাধিকবার হুমায়রার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। নাভিদ আসগর বলেন, আমার মা শেষবার যখন তার সঙ্গে কথা বলেন, তিনি তখন নতুন ঠিকানা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হুমায়রা তা জানাননি। এমনকি তার ফোনও প্রায় ছয় মাস ধরে বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন:

‘বর্ষা বিহনে’ নাটকে সজল ও সুষমা

এপ্রিলে বিয়ে, জুলাইয়েই বিচ্ছেদের গুঞ্জন তারকা দম্পতির