![]() |

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহর ও আশপাশের গ্রামের শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে আছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ যেন এক জলাশয়। কলেজে প্রবেশ করতেই কাদামাটি ও পঁচা পানির গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রাস্তা ও কলেজ এলাকা যেন এখন নদী বা প্রকৃতিক জলাশয় রুপ নিয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত রাস্তা ঘাটাসহ পুরা কলেজ ক্যাম্পস এলাকা। ভিজা জামা-কাপড়ে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শহরের বহিরের উপজেলা গুলোও একই অবস্থা প্রায়। পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ স্কুল, বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুল, ভোমরা রাশিদা স্কুল, বহু প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভেলা, বাঁশ বা জুতা হাতে নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ে। স্কুল মাঠগুলোতেও জমেছে পঁচা পানি। অভিভাবকরাও হতাশ। তাদের প্রশ্ন এই দুর্যোগে সন্তানদের স্কুলে পাঠাবো কিভাবে? শিশুরা ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেক অভিভাবক।
জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে শহরতলির উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল, মাছখোলা, পাড়মাছ খোলাসহ তালতলা এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, প্রতি বছর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। কলেজের ভিতরেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পুরা কলেজ ক্যাম্পাস পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তৈবুর রহমান বলেন, আমাদের কলেজের আশেপাশে পুরা এলাকা এখন পনির তলায় নিমজ্জিত হয়ে।রয়েছে। এতে প্যান্ট গুটিয়ে হাটু সমান পানি ঠেলে কলেজে মূল ভবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ড্রেনের পঁচা পানি ও বৃষ্টির পানিতে একা-কার হয়ে রয়েছে। পায়ে চুলকানির দেখা দিচ্ছে। আমরা তো প্যান্ট গুটিয়ে কলেজে উঠতে পারছি ! তাহলে মেয়েরা কি করবে? এখন তো পরীক্ষা চলছে কলেজে তো আসাই লাগবে।
শারমিন আক্তার নামের একজন এইসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, আমাদের বৃষ্টির মধ্যে ভিজে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ভেজা কাপড়ে কি ৩ ঘন্টা পরীক্ষা হলে থাকা যায়? আমরা মেয়ে মানুষ আলাদা কাপড়ে নিয়ে আসবো সে পরিবেশ নাই।
দেলোয়ার নামের একজন অভিভাবক বলেন, বলেন আমার মেয়ের পরীক্ষা আমি তাকে নিয়ে কলেজে পৌঁছে দিতে এসেছি। এসে দেখছি কলেজের চারিপাশে বৃষ্টি ও ড্রেনের পঁচা পানিতে নিমজ্জিত। হাটু সমান পানি পার হয়ে কলেজের মূল ভবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে এমন অবস্থায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিবে কি করে? বলে উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি পেরিয়ে ক্লাসে যাচ্ছেএটাই কি শিক্ষার পরিবেশ? দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাঠ ও মনোবলে পিছিয়ে পড়বে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। দ্রুত উন্নতির আশা করছি।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, শুধু প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয় এ জন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, জেলার বিভিন্ন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাই খাল খননের পাশাপাশি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।
জেলা তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩০০+ সরকারি প্রাথমিক, ৫০০+ মাধ্যমিক ও ৬০টির বেশি কলেজ রয়েছে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
| সাতক্ষীরায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত, ব্যাহত পরীক্ষা-ক্লাস https://corporatesangbad.com/516453/ |