আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে ‘প্রয়োজনীয় শর্তে’ ইসরায়েল রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ স্পেশালে বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তির সময় “আমরা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সব পক্ষের সাথে কাজ করব”।
যদিও কী শর্তে এই যুদ্ধবিরতি হতে পারে সে সব কিছুই স্পষ্ট করে বলেন তিনি।
“কাতার এবং মিশরের যারা গাজায় শান্তি আনার জন্য খুবই কঠোর পরিশ্রম করেছে, তারাই এই চূড়ান্ত প্রস্তাবটি পৌঁছে দেবে। আমি আশা করি, হামাস এই চুক্তিটি মেনে নেবে। কারণ এর চেয়ে ভালো কিছু আর আসবে না, উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে,” বলেন ট্রাম্প।
এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালায় সেই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৪৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য সংস্থা।
যদিও এর আগেও এক দফা যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মার্চ থেকে আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে যুদ্ধ বিরতি যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেই শর্ত হামাস মানবে কি-না সেটি তাৎক্ষণিকভাবে এখনই স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমনন এক সময় এলো যখন আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে তার (ট্রাম্পের) বৈঠক হওয়ার করা রয়েছে।
এই বৈঠকের আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়ে বলেছেন যে তিনি এই অবস্থানে “অত্যন্ত দৃঢ়” থাকবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। আমি আপনাদের বলতে পারি, তিনি চান। আমার মনে হয় আগামী সপ্তাহে আমাদের মধ্যে একটি চুক্তি হবে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইসরায়েলের স্ট্রাটিজিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সাথে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল।
গত সপ্তাহে, হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করার প্রচেষ্টা জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ইসরায়েলের সাথে আলোচনায় তা খুব একটা গতি পায়নি, অনেকটা স্থবির হয়েই রয়েছে। ইসরায়েল বলে আসছে, এই সংঘাত তখনই বন্ধ হবে যখন হামাস পুরোপুরি ধ্বংস হবে।
অন্যদিকে, হামাস বহুদিন ধরেই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
গাজায় এখনো প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন এখনো জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইসরায়েল উত্তর গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযানের আগে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সোমবার গাজা শহরের একটি সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফেতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এই সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরও বলেছে, যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলির ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে ১৭০টির বেশি দাতব্য সংস্থা ও এনজিও এই বিতর্কিত সংস্থাটিকে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
অক্সফাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনসহ সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী ‘নিয়মিতভাবেই’ ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায়।
তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, হামাসের হস্তক্ষেপ কমানোর জন্যই এই সাহায্য সংস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গত মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যায় যখন ইসরায়েল গাজায় নতুন করে হামলা চালায়। তখন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ওই পদক্ষেপকে প্রতিরোধমূলক হিসেবেই আখ্যা দিয়েছিল।
এক বছরেও বেশি সময় যুদ্ধের পর গত ১৯শে জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুরু হয়েছিল। যার তিনটি ধাপ ছিল, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী এর প্রথম ধাপই শেষ হয়নি। তার আগেই চুক্তি ভেঙে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল।
প্রথম দফা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কী ছিল?
গত ১৯ শে জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছিল। যুদ্ধ শেষ করার চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের বিনিময় এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রথম পর্যায়ে, হামাস প্রায় ১৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে প্রথমে ২৫ জন ও পরে আরও আটজন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়।
এদিকে, ইসরায়েল গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের এলাকায় ফিরে যেতে দেয়। গত চৌঠা ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল–– একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার এবং বাকি সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি।
তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার এবং গাজার পুনর্গঠন শুরু করার কথা রয়েছে, যার জন্য কয়েক বছর সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র-বিবিসি।