কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : বায়ুদূষণ রোধে সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইসাথে বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধির সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় পরিবেশ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এটি রোধে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে।”
পাশাপাশি জিরো সয়েল, নো ব্রিক ফিল্ডসহ এয়ার কোয়ালিটি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই উপদেষ্টা। একইসাথে সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি তুলে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “বায়ুদূষণ রোধে শীতকাল বা আগামী অক্টোবরের আগে ভাঙাচোরা রাস্তার মেরামত কাজ শেষ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হবে পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি। এছাড়া নতুন ২৫০টি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, ধোঁয়ার নির্গমন মান কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করতে ১০টি স্বয়ংক্রিয় যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণে চীনা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে বলে জানান রিজওয়ানা।
তিনি আরো জানান, সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ টেকসই নীতিনির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপদেষ্টা জানান, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, আধুনিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন, বৈশ্বিক মান অনুসারে নির্গমন মান উন্নয়ন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও বর্জ্য দহন কেন্দ্র চালু করা এবং পরিচ্ছন্ন রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
স্যানিটারি ল্যান্ডফিল হলো এমনভাবে ময়লা-আবর্জনা মাটির নিচে ফেলা, যাতে পরিবেশ দূষণ না হয় এবং পানি বা বায়ুর মান খারাপ না হয়।
তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও উদ্যোগে কর প্রণোদনার বিষয়টিও সরকার পর্যালোচনা করছে। বিক্যাপ প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ অধিদফতর (ডিওই) উচ্চমাত্রায় দূষণকারী শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে। পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ ও গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা হবে।
এদিকে, পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা উৎসাহিত করতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সড়কে বেড়া স্থাপন করবে এবং পরিবেশবান্ধব ৫০টি বৈদ্যুতিক যান চালু করবে।
তিনি জানান, জাপানের অর্থায়নে বায়ুর গুণগত মান সরাসরি পরিমাপে আটটি বাস্তবভিত্তিক বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে করে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নীতিনির্ধারণ সহজ হবে। এই উদ্যোগকে সহায়তার জন্য ‘বেস্ট’ প্রকল্পও চালু করা হবে।
চীনা বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতায় বায়ুদূষণ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি দেশবাসীর জন্য একটি পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, চীনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুষদের নির্বাহী ডিন অধ্যাপক ইউ ঝাও, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানজিং-হেলসিঙ্কি ইনস্টিটিউট ইন অ্যাটমোসফেরিক অ্যান্ড আর্থ সিস্টেম সায়েন্সেসের উপ-ডিন ড. হাইকুন ওয়াং এবং স্কুল অব অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক ড. তেংইউ লিউ।