বেনাপোল স্থলবন্দরে হাঁটুপানিতে পণ্য খালাস, পরিবহন কার্যক্রম ব্যাহত

Posted on June 19, 2025

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: গত দুই তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বুধবার (১৮ জুন) ঘুরে দেখা যায় স্থল বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও গুদামে হাঁটুপানি জমে থাকায় পণ্য খালাস ও পরিবহন কার্যক্রমে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই অবস্থায় কয়েকটি প্রবেশগেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলছেন ব্যবসায়ীরা। জলাবদ্ধতার কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, রেল কর্তৃপক্ষ কালভার্ট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টিপাত হলেই বন্দর এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এর ফলে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নিরাপত্তাকর্মীদের চলাফেরাও দুরূহ হয়ে পড়ে। এমনকি কোথাও কোথাও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি জমে থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে চর্মরোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বন্দরের একটি ইয়ার্ড প্রথম দেখায় জলাশয় মনে হলেও সেটি মূলত চ্যাটিজ টার্মিনাল, যেখানে ট্রাক পার্কিং ও আমদানি পণ্য খালাস হয়। বেনাপোল বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণে রয়েছে ৩৩টি শেড ও তিনটি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। কিন্তু অধিকাংশ অবকাঠামোই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদামগুলো নিচু হওয়ায় পানির স্বাভাবিক নিষ্কাশন সম্ভব হয় না। ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং কর্মীদের চলাফেরায় ভোগান্তি বাড়ছে। এ নিয়ে একাধিকবার ব্যবসায়ীরা বন্দরের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বন্দরে আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিকেলসামগ্রী এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যা বৃষ্টির পানিতে মিশে শ্রমিকদের চর্মরোগে আক্রান্ত করছে।

একাধিক বন্দরশ্রমিক জানান, প্রতিদিন হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়ে চুলকানি ও নানা অসুস্থতায় পড়তে হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরাও একই অভিযোগ করেছেন।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। পণ্যাগারে যেকোনো সময় পানি ঢুকে পড়তে পারে। অথচ এই বন্দর থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চলছে।

এব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান জানান, বেনাপোল হলো দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। বছরে এই বন্দর থেকে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বৃষ্টির পানি পণ্যাগারে যেকোনো সময় পানি ঢুকে পড়লে লোকসানের শিকার হতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাযীকে। এজন্য আমাদের দাবি হলো বেনাপোল কাস্টম থেকে সরকার যে রাজস্ব আদায় করে থাকে, তার একটি অংশ যশোরের উন্নয়নে বরাদ্দ রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ কালভার্ট না রেখে রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।