![]() |

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে নৈরাজ্যের রাজত্ব! সরকারি ওষুধ বিক্রি, মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন প্রয়োগ, কমিশনের বাণিজ্য, রোগীদের হুইলচেয়ার ব্যবহারেও আদায় করা হচ্ছে টাকা। স্বাস্থ্যসেবা নয়, এখানে যেন চলছে অবাধ দুর্নীতির মহোৎসব।
গত বুধবার (১১ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে এসব অনিয়মের দৃশ্য চোখে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল হাসপাতালে পৌঁছালে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মেডিসিন (মহিলা) বিভাগে দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয় হরষিতকে মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারি ওষুধ বিক্রির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেনা সদস্যদের কাছে হরষিত স্বীকার করেন, ছয়-সাত মাস আগে হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ওষুধ কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। সম্প্রতি রোগীদের কাছে সেগুলো বিক্রি করেছি।
সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ঈদের পরদিন আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহ নেই বলে জানানো হলেও পরবতীতে ওয়ার্ড বয় হরষিত নিজের কাছে থাকা প্রতিটি ইনজেকশন ৫০০ টাকা করে বিক্রি করে। পরে দেখা যায়, ইনজেকশনগুলোর মেয়াদ ৪ মাস আগে শেষ।
তিনি বলেন, ব্যবহার করার পর আমার স্ত্রীর শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তখন বুঝি, প্রতারিত হয়েছি।
তালা উপজেলার জাতপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, “গরিব মানুষ হিসেবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ভরসায় আসি। কিন্তু এখানে প্রতিটি ধাপে টাকা দিতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রেসার মাপা, এমনকি টয়লেটেও টাকা!
রোগী সাইফুল ইসলামের স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জরুরি বিভাগ থেকে রোগী তিন তলায় তোলার সময় হুইলচেয়ারের জন্য টাকা দিতে হয়। অনুরোধ করলেও ওয়ার্ড বয় সাফ জানায় আপনার আম্মু মারা গেলেও আমার কিছু আসে যায় না।
রোগী আব্দুল গফুর বলেন, হুইলচেয়ারে ব্যবহার করে টয়লেটে যাওয়ার সময় ও ১০০ টাকা দিতে হয় না দিলে চেয়ার মেলেনা! সরকারি হাসপাতাল যদি এমন হয়, তাহলে গরিবরা যাবে কোথায়?
সচেতন নাগরিকদের মতে, এ ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়! স্বাস্থ্যসেবার নামে বাণিজ্য ও দুর্নীতি রোধে দ্রুত দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নিলে জনগণের আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। এটি শুধু সাতক্ষীরার সমস্যা নয় দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের একই অবস্থা।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সরকারি ওষুধ ডাস্টবিনে যাওয়ার কথা নয়। হাসপাতালের স্টোর থেকে সেগুলো সরবরাহ হয়। কিন্তু বাস্তবে তা যাচ্ছে কিছু অসাধু কর্মচারীর পকেটে। এটা চরম দুর্নীতি। আমরা এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই খোদা জানান, ওষুধ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষী প্রমাণিত হলে বহিষ্কার করা হবে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
| ডাস্টবিনের ওষুধ রোগীর শরীরে! https://corporatesangbad.com/513478/ |