সাবেক এমপি হেনরী দম্পতির রিমান্ডে কোটি টাকার ঘুষ! তদন্তের মুখে ৫ পুলিশ সদস্য

Posted on June 1, 2025

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সাবেক এমপি জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও তাঁর স্বামী সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুর রিমান্ডে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর থানার তৎকালীন ওসি হুমায়ুন কবীর, পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ, এসআই মনির হোসেন, এসআই আব্দুর রাজ্জাক ও এসআই শাহিন মিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান।

বর্তমানে অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ রংপুর রেঞ্জে, কেউ রাজশাহী সিআইডিতে, আবার কেউ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন থানায় বদলি হয়েছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মনির, রাজ্জাক বা মজিদ। শাহিন বলেন, “অভিযোগ করলেই হবে না, প্রমাণ লাগবে।” ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি তদন্ত কমিটির ডাকে গিয়ে নিজের বক্তব্য দিয়েছেন।

জানা যায়, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর হেনরী ও লাবুকে একাধিক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁদের পরিবার। সদর দপ্তরে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, লেনদেনের সময়কার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের মোবাইল কললিস্ট (সিডিআর) যাচাইয়ের দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, হেনরীর বোন ও দুলাভাই একটি লাল প্রাইভেট কারে করে থানার পাশে পৌরসভার ডিজিটাল ডাস্টবিন সংলগ্ন স্থানে এসে ঘুষের অর্থ হস্তান্তর করেন। সেই ফুটেজ যাচাইয়ের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, “অভিযোগ তদন্ত আমাদের রুটিন ওয়ার্কের অংশ। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে আলোচনায় আসেন হেনরী ও লাবু। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্তি পেলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি মামলা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার করে এবং বর্তমানে তাঁরা সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি আছেন।

সামগ্রিক ঘটনায় পুলিশের একটি অংশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।