ভোমরা বন্দরে কাস্টমস্ কর্মকতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ; টাকা না দিলে মেলে না বিল অব এন্ট্রি

Posted on November 4, 2023

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ভারত থেকে আমদানিকৃত ট্রাক সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে প্রবেশ পর বিল অব এন্ট্রি করার জন্য কাস্টমস্ অফিসে অগ্রিম ২ হাজার টাকা না দেয়া পর্যন্ত বিল অব এন্ট্রি নাম্বার মেলে না।

পণ্য ভেদে হলুদের ক্ষেত্রে ট্রাক প্রতি ২ হাজার, শুকনা মরিচের ক্ষেত্রে ৩ হাজার, খৈল সাপটার ক্ষেত্রে ১০০ মেট্রিঃ টনে ১৫ হাজার, ভূষি সাপটার ক্ষেত্রে ১০০ মেট্রিঃ টনে ৩০ হাজার, ভূষিতে ৫ হাজার, সিরামিক পণ্যের ক্ষেত্রে ১০ হাজার এবং পিঁয়াজের ক্ষেত্রে ট্রাক প্রতি ২০০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে। 

ভারতীয় ট্রাক প্রতি জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা কেনো নেওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে সিএন্ডএফ লাইসেন্স বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা নেতারা। আর এ সব টাকা লেনদেন হয় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো.রাজিব হোসেনের মাধ্যমে। 

ভোমরা স্থল বন্দর শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হকের এমন হয়রানির ফলে অনেক ব্যবসায়ী  এই বন্দর থেকে মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলেও দাবী  তাদের। 

গত ২৯ অক্টোবর ভোমরা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ২৯ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এসোসিয়েশনের সভায় এ সব অভিযোগ তোলে ব্যাবসায়ী নেতারা।

ভারতীয় ট্রাকের ফাইল প্রতি অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস'র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সিএন্ডএফ কর্মকতাসহ বন্দরের ব্যাবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, বন্দর থেকে ভারতীয় ট্রাক বের করার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০টির অধিক স্টাম্প করতে হয়। স্টাম্প প্রতি ডেপুটি কমিশনারকে নগদ ২ হাজার টাকা এবং পরিক্ষনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা প্রদান না করা পর্যন্ত স্টাম্পে সই করেন না। রপ্তানীকৃত পন্যের ক্ষেত্রেও বি/ই প্রতি অগ্রিম ১ হাজার টাকা প্রদান না করিলে বি/ই নাম্বার ফেলতে দেওয়া হয় না এবং পন্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বি/ই প্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করছে। 

সভায় বক্তারা আরও বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে রপ্তানি জন্য উৎসাহিত করেছেন সেখানে তিনি ভোমরা বন্দর দিয়ে কেন রপ্তানি বাড়াচ্ছে তা ক্ষতিয়ে দেখার নামে বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বি/ই সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পাথরের ক্ষেত্রে ১০ ট্রাকে ১টি এবং অন্যান্য পন্যের ক্ষেত্রে ০৫ ট্রাকে ১টি বি/ই নির্ধারণ করে দিয়েছে, যাহা ১৯৯৬ সাল থেকে এপর্যন্ত কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। অবৈধ টাকা আদায় এবং ডেপুটি কমিশনারের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবী জানান ব্যবসায়ীরা। 

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থল বন্দরে শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক বিরুদ্ধে ঘুষসহ নানান অনিয়ম-দুর্নীতি আমাদের নজরে আসে। ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল সংগঠনের সমন্বয়ে যৌথ সভা করি এবং ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তার দূর্নীতি ও অপকর্মসহ বিষয়ে এনবিআর'র চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস'র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো।

ভোমরা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু বলেন, ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক যোগদানের পর থেকে তার ব্যক্তিগত কিছু অসাদু কর্মকর্তার যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা গত ২৯ অক্টোবার যৌথ সভা করি। সভায় তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠে আমরা তা লিপিবদ্ধ করে এনবিআর'র চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস'র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, ব্যবসায়ীরা ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করেন। আমিও বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পেয়ে খুলনা কাস্টমস'র কমিশনারকে অবহিত করেছি। অনতিবিলম্বে তাকে অব্যাহতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। 

এ বিষয়ে ভোমরা স্থল বন্দরের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) মো.রাজিব হোসেন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে  টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কোন টাকা নেই না কেউ যদি এমন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক জানান, আমি গত ৬ আগস্ট যোগদানের পর থেকে আগের তুলনায় দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। তারা গাড়ি প্রতি দুই থেকে তিন টন পর্যন্ত ছাড় চায়। এটা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছে আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে স্কেলেএখন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে (জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হলেও রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬ কোটি ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৪ টাকা। যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৩.৯৮ শতাংশ।