অভিনয়-রাজনীতিকে বিদায় জানালেন সোহেল রানা

Posted on April 19, 2025

বিনোদন ডেস্ক :অভিনয়-রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন ৭৯ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র কিংবদন্তি।

সোহেল রানার ভাষ্য, ‘১৯৭৩ সালে অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে বয়স ও শারীরিক কারণে আর আগের মতো কাজ সম্ভব হচ্ছে না। তাই অভিনয় ও রাজনীতি— দুই ক্ষেত্র থেকেই বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অভিনয়-প্রযোজনার বাইরে সোহেল রানার রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে (জাপা) যোগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হন।​ ২০২০ সালে সোহেল রানা জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে তিনি জাতীয় পার্টির প্রধান রওশন এরশাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুনরায় দলটিতে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এছাড়া গত বছর তার নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের ইতমধ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটে ছিল। প্রাথমিকভাবে দলটির নাম রাখা হয় ‘বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি’ (বিআইপি), যাদের লোগোতে শোভা পেয়েছিল শান্তির প্রতীক পায়রা। তবে অনিবার্য কারণ বশত সংশোধোন করে নতুন ঐ রাজনৈতিক দলের রাখা হয়েছে  ‘বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি’। 

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ প্রযোজনা করে ১৯৭২ সালে শোবিজে পা রাখেন মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

শুধু বয়স নয়, অভিনয় থেকে অবসরের কারণ আরও রয়েছে এই অভিনেতার যুক্তিতে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে ধরনের চরিত্র লেখা হয়, তাতে আমাদের মতো শিল্পীদের জায়গা নেই। বিদেশি সিনেমায় বয়সী শিল্পীদের জন্য আলাদা করে চরিত্র তৈরি হয়, আমাদের দেশে তা হয় না।’

এসব নিয়ে তার ভেতরে জমেছে আক্ষেপের ঘন স্তর আর অভিমান। তার ভাষায়, ‘চলচ্চিত্রজগৎ তো এখন শেষ। এখন দু-চারজন যারা করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের প্রজন্মের মিলছে না। যেভাবে আমাদের ব্যবহার করার কথা, তেমন উপযুক্ততা তাদের নেই। বিদেশি সিনেমায় দেখি, আমাদের বয়সের শিল্পীরা দিব্যি কাজ করছেন। তাদের জন্য আলাদাভাবে চরিত্র ও গল্প লেখা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম কিছু হচ্ছে না। আমাদের এখানে শিল্পীদের বয়স হয়ে গেলে শুধু বাবা-মা, চাচাদের ক্যারেক্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পারফর্ম করার সুযোগ থাকলে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা কোনও সমস্যা নয়। কিন্তু তা না হলে তো অভিনয়ের মানে হয় না। আমি সেই জায়গায় থেকেই চলে যেতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, অভিনয় থেকে অবসরের সবচেয়ে বড় কারণ বয়স। এখন আমার ৭৯ বছর। অভিনয় ও রাজনীতি দুটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে হলে অনেক অ্যাক্টিভিটি করা প্রয়োজন, প্রচুর পড়াশোনার প্রয়োজন। শারীরিক অবস্থার কারণে এগুলো তো করতে পারছি না। এখন থাকা মানে জোর করে থাকা।

সোহেল রানা শেষ অভিনয় করেন ‘মধ্যবিত্ত’ নামে একটি সিনেমায়, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুক্তি পায়।