হোলি আর্টিজান মামলা: ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড

Posted on October 30, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আলোচিত রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ৭ জনকে দেয়া নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ড রায় কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসা‌মিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল এহসান জোবায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সব আসামির মৃত্যুদণ্ড যেন বহাল থাকে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

২০১৯ সালে ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান নামে একজনকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জঙ্গিরা।

কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন-জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেছিলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ’ ঘটিয়েছে। সাজার ক্ষেত্রে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা।

নৃশংস এ হামলায় ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি, এক ভারতীয়, এক বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম প্রাণ হারান।

হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।

গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার পর ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এই হামলা মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হোলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যু দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসে। এরপর এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার এই পেপারবুক শুনানির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়। চলতি বছর মে মাসে আপিল আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ১১ অক্টোবর শেষ হয়।