দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন

Posted on March 18, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর উপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম ‘যমুনা রেলসেতু’ উদ্বোধন করা হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত এই রেলসেতু উদ্বোধনের পর উদ্বোধনী ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে সেতু পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন এলাকায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।

রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্ব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি এবং জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মহা-পরিচালক ইতো তেরুয়ুকি।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টায় প্রথম ট্রেন সেতুর ওপর দিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং মাত্র সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে সিরাজগঞ্জ অংশে পৌঁছায়।

নতুন সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে উঠবে, যা বাংলাদেশর উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, সেতুটি বর্তমানে সিঙ্গেল লেনের কারণে পুরোপুরি সুবিধা প্রদান করতে পারছে না যাত্রীদের।

উদ্বোধনের পর অতিথিরা পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তে সায়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন সম্পন্ন করেন এবং পরে পুনরায় সেতুর পূর্ব প্রান্তে ফিরে আসেন।

এখন পর্যন্ত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে সেতুটি অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছায়। পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর সময় একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হয় ও সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ৩ মিনিট।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যেই যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করবে ট্রেন। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। আগে যেখানে এক ট্রেন অন্য ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো, এখন দুইটি রেল একসাথে চলাচল করতে পারবে তাই আর অপেক্ষা করতে হবে না।

সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের দিন থেকে প্রথম পর্যায়ে সেতু নিয়ে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ মিনিট। এর আগে যমুনা সেতু দিয়ে ট্রেন পার হতে ২০ মিনিট লাগতো।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতুটি ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত। নতুন রেলওয়ে সেতুটি যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে অবস্থিত। দেশের দীর্ঘতম ও আধুনিক এ সেতুর ওপর দিয়ে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে। ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ৩৮টি ট্রেন প্রতিদিন তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে যাতায়াত করে।

আরও পড়ুন:

খুলে যাচ্ছে ৯ উড়াল সেতু, উত্তরের ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির