শাহজাদপুরে শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মামলা

Posted on October 29, 2023

সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে ৬ বছরের শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার মামলা নিয়েছেন।

একই এলাকার আব্দুল আলিম মোল্লা (৪৫) কে একমাত্র আসামী করে শিশুটির বাবা মানিক সরকার বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় শাহজাদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে নিপীড়নকারী আব্দুল আলিম মোল্লা পলাতক রয়েছে। ঘটনার ৪ দিনেরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে শনিবার বিকেলে শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলাম রব্বানির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় শিশুটিক তার মা আয়শা খাতুন ও বাবা মানিক সরকার কোলে নিয়ে আদালতে হাজির হন। শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতের জিআরও মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার ৩দিন পাড় হলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় শিশুটির পরিবার থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অনিহার অভিযোগ তোলেন।

শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত বুধবার রাতে ভিকটিমকে অসুস্থ্য অবস্থায় তার মা-বাবা থানায় নিয়ে আসে। শিশুটির মৌখিক জবানবন্দি শুনে দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আর থানায় যোগাযোগ করেনি। পরে শুক্রবার রাতে শিশুটির বাবাকে হাসপাতাল থেকে ডেকে এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শনিবার বিকেলে জবানবন্দি দেয়ার জন্য শিশুটিকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিপীড়নকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় কেকে কিনে দেয়ার প্রলোভনে শিশুটিকে গোপীনাথপুর নতুনপাড়া গ্রামের কফিল মোল্লার ছেলে আব্দুল আলিম মোল্লা (৪৫) নৌকায় তুলে নিয়ে বিলেন মাঝের একটি নির্জন কাঠ বাগানে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে। এ সময় শিশুটির গোপনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে ও শিশুটির আত্মটিৎকারে তাকে দ্রুত বাড়ির পাশের বিলের পাড়ে নৌকা থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন বিলের পাড় থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে শিশুটি তার মায়ের কাছে গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া করছে বলে জানায় এবং আব্দুল আলিম মোল্লা তাকে কেক কিনে দেয়ার কথা বলে নৌকায় করে বিলের মধ্যে নিয়ে রিপীড়ন করেছে বলে জানায়। তাৎক্ষণিক ভাবে তারা আব্দুল আলিম মোল্লার বাড়িতে এ বিষয়ে বিচার চাইতে গেলে তারা বিষয়টি গোপন রাখতে ভয়ভীতি দেখায়। পরে শিশুটি আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তারা প্রথমে থানায় ও পরে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে'। থানায় বিষয়টি বুধবার রাতেই অবহিত করার পরেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় শিশুটির পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অনিহার অভিযোগ তোলেন।'

এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শারমিন আলম বলেন, ধর্ষণ বলতে বুঝায় যেকোনো বয়সের নারী বা পুরুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বা ১৬ বছরের নিচে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক যে কোনো শিশুর শরীরের যে কোনো স্পর্শকাতর স্থানে যে কোনো কিছু দ্বারা নিপীড়নের শিকারকে বুঝায়। তিনি আরও বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুটির গোপনাঙ্গের অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত পেয়েছি। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। সে এখন অনেকটাই সুস্থ্য আছে। চিকিৎসা শেষে তাকে অচিরেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা যা পেয়েছি তা নির্ধারিত ফরমে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। প্রয়োজন হলে ডিএনএ টেস্ট সহ আরও অধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

শিশুটির বাবা মানিক সরকার বলেন, থানা পুলিশের নিষেধ থাকায় আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবোনা।