মাহিদুল ইসলাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোম্পানির এমডির বেতন অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় কোম্পানির মুনাফা বাড়েনি দেয়নি ডিভিডেন্ট।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) প্রতিমাসে যে পরিমাণ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, ডিভিডেন্ট ঘোষণা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।
১ম পর্ব প্রকাশের পর, ২য় পর্যায়ে আজ তুলে ধরা হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেসের ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত।
২০১৫ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৭১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল .৬৩ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ১২.৫৫ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৭১ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
২০১৬ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল .৬৪ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ১২.৫৯ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
২০১৭ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.৭২ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ১৩.৭১ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল। বছরে ৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়ে এমডিসহ অন্যান্যরা নিজেরাই নিয়েছেন ১১ কেটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
২০১৮ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল .৬৫ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ১২.৮৯ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল। বছরে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: আব্দুল খালেক খান ও অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সমন্বিত বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। উক্ত বছর কোম্পানিটির নিট ক্ষতি হয়েছিল ২৮০৩ কোটি টাকা এবং সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি লোকশান হয়েছিল ১২৬.৩৬ টাকা যা আগের বছর একই সময় শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল .৫১ টাকা। ঐ বছর সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল -১১৩.৬৩ যা আগের বছর একই সময় হয়েছিল ১২.৭২ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। বছরে ২৮০৩ কোটি টাকা ক্ষতি করে এমডিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ৫কোটি ৪৬ লাখ টাকা নিলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
২০১৫ সালে কোম্পানির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স ছিল ১৯০০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যা ২০১৯ সালে হয়েছিল ৩৮৭৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানিটির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স বেড়েছে ১৯৭৬ কোটি টাকা।
পক্ষান্তরে, ২০১৫ সালে কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি ছিল ১৩৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা যা ২০১৯ সালে হয়েছিল ২৭৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি বেড়েছে ১৪১০.৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এছাড়া, ২০১৫ সালে কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় ছিল ৯ কোটি ৫৫ লাখ যা ২০১৯ সালে হয়েছিল (২৭৯৮) কোটি (৫১) লাখ। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় নেগেটিভ হয়েছে ২৭৮৮ কোটি ৯৬ টাকা।
২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে এম.এ. হাসেম চেয়ারম্যান থাকা কালীন সময় করোণার আগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ঘটে যায় সর্বকালের সেরা পুকুরচুরির মতো ঘটনা। এক সময় কোস্পানিটির বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠান বাচাতে এবং বিনিয়োগ ফেরতের আশায় হাইকোর্ট ডিভিশনে কোম্পানি বেঞ্চে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোম্পানি ম্যাটার নং ২৯৯/২০১৯ এর আদেশে ০১ জুন, ২০২০ সালে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কোম্পানি চালু রেখে বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের নির্দেশ দেন। কোর্ট এপয়েন্টেড পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন মো: নজরুল ইসলাম খান এবং ব্যবস্থপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন মো: মশিউর রহমান। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ছিলেন সৈয়দ আবু বখতিয়ার আহমেদ, মো: সফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফ আলী, মো: মেফতাউল করিম ও মো: এনামুল হাসান এফসিএ।
প্রিয় পাঠক, আজ দেখলেন দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব আগামীকাল, সাথেই থাকুন।