চা শিল্পে ইতিহাসের সাক্ষী শ্রীমঙ্গলের ‘ফিনলে রানওয়ে’

Posted on February 24, 2025

তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: "একটি পাতা দুটি কুঁড়ি" চায়ের রাজধানী বলে বিশ্বব্যাপী পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। এখানকার চা বাগান, রাবার ও অন্যান্য কৃষিপণ্য ছাড়াও রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান ‘ফিনলে রানওয়ে’। এই রানওয়ে একসময় ছিল ব্রিটিশ আমলের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিমান ব্যবহারে রানওয়ের স্থান এবং আজও তা শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসের অংশ হিসেবে স্থির ঠাড় রয়ে গেছে।

শ্রীমঙ্গল অঞ্চলটি চায়ের জন্য দেশ পেরিয়ে বহির্বিশ্বে খ্যাত হলেও এর ইতিহাসও সমানভাবে সমৃদ্ধ। ১৮৩৯ সালে চায়ের চাষ শুরু হলেও ১৮৬০ সালে তৎকালীন দক্ষিণ শ্রীহট্ট (বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলা) মহকুমায় প্রথম চা চাষ শুরু হয়। সে সময়ে দেশের চা শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও ব্রিটিশরা শ্রীমঙ্গলে চায়ের চাষ ব্যাপকভাবে চালু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফিনলে কোম্পানি’, যা চায়ের উৎপাদন এবং বাগান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৮৭১ সালে ইংল্যান্ডের ‘ফিনলে’ কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী জন ম্যুর ভারতে এসে চা বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই কোম্পানির অধীনে বিভিন্ন চা বাগান প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগের পাশাপাশি বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয় চা উৎপাদনে দক্ষ বিদেশিকর্মী। তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯৪৫ সালে শ্রীমঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফিনলে রানওয়ে’ বা বিমান ধারনপথ।

প্রথম দিকে, ফিনলে কোম্পানির ইংলিশ কর্মকর্তা ওটি প্ল্যান্টাররা এই রানওয়ে ব্যবহার করতেন এবং শ্রীমঙ্গলে তাদের যাতায়াত ছিল সহজতর। এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যা শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়িক ভাবে কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আর ব্যবহৃত হয়নি, যদিও এটি এখনও শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসের সাক্ষর অংশ হিসেবে কীর্তিত রয়েছে।

বর্তমানে, ফিনলে রানওয়ে জায়গাটি আগের মত ব্যবহৃত না হলেও শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসের সাক্ষীর অংশ হয়ে আছে। শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা চা বাগানের পাশেই অবস্থিত এই রানওয়ে, যা একসময় শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ছিল। দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

২০০৪ সালে ফিনলে কোম্পানি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর, এই রানওয়ে প্রাঙ্গনটি কাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এবং এখন সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে পর্যটকরা এখনো এই ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে আসেন এবং শ্রীমঙ্গলের অতীতের স্মৃতি ধারণ করে রাখেন।

ফিনলে রানওয়ে আজও শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে টিকে আছে। এটি শুধু শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের চা শিল্পের ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং বাংলাদেশের চা শিল্পে অগ্রগতির প্রতীকও হয়ে দাঁড়িয়েছে।