কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত

Posted on February 19, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত মঙ্গলবারের ঘটনায় জরুরি সিন্ডিকেটে মোট পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৩- এর ধারা ৪৪ (৫) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

এ আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী চাকুরীচ্যুত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তদন্ত সাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

হামলায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।

শাহেদুজ্জামান শেখ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে। কমিটির সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. এম. এম. এ. হাসেম, সদস্য সচিব সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।'

এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয়দফা দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপাচার্য এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সকাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করতে শুরু করেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে যারা ভাড়া রয়েছেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এর আগে, কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয় অর্ধশত শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল থেকেই তারা কুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রশাসনিক একাডেমিক ভবনে প্রবেশপথের ফটকে তালাবদ্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে উপচার্যসহ অন্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। 

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী। আহতদের কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।