নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে ২৩টি ইটভাটা। এসব ভাটা ফসলি জমি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এগুলো বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা।
জানা গেছে, উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে ২৩টি ইটভাটার কারণে দূষণের কবলে পড়েছে পুরো এলাকা। ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় কমে গেছে খাদ্য শস্য উৎপাদন এবং নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল। পাশাপাশি কৃষি জমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করায় চক পরিনত হয়েছে জলাশয়ে।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বলধারা ইউনিয়নে মোট ইটভাটা ছিল ৩২টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৯ টি। বাকি ২৩ টির মধ্যে দুইটি উচ্চ আদালতে রিট ও তিনটির কার্যক্রম চলছে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই। এগুলো হচ্ছে – আব্দুল কুদ্দুস কোম্পানি ও তার ভাইয়ের মালিকানাধীন মোহনা, সহনা ও এএবি ব্রিকস,সফুর ব্রিকস -২ এবং ডিএমপি ব্রিকস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এএবি কোম্পানির চারটি লাইসেন্সেই চলছে প্রায় ডজন খানেক ইটভাটা। এ ছাড়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কাগজপত্রে সহনা ব্রিকস থাকলেও বাস্তবে তা হয়েছে এএবি।
তেলিখোলা ও মোল্লা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর, রাজ্জাক, মোয়াজ্জেমসহ অনেকেই বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী খোলা পাড়া গ্রামটি ইটভাটার গ্রামে পরিনত হয়েছে। এ গ্রামটিকে ঘিরে রয়েছে ৭টি ইটভাটা। এতে চাষাবাদযোগ্য জমি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কখনো আর্থিক সুবিধা কখনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা ভাটাগুলো দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপন, ইট মাপে কম ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়। তারপরও থেমে নেই অনুমোদনবিহীন এসব ভাটার কার্যক্রম।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও ভূক্তভোগী জানিয়েছেন, খোলাপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী কুদ্দুস কোম্পানি নিজের ভাটাগুলো ভাড়া দিয়ে জমজমাট মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ও তার ভাইয়েরা মিলে কখনো পুকুর-জলাশয়ে ড্রেজার আবার কখনো বা ভেকু লাগিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে প্রতিনিয়ত ইটভাটায় সরবরাহ করছেন। এতে পুরো দু’টি চকই পরিনত হয়েছে গভীর জলাশয়ে। এরা এতোটাই বেপরোয়া যে এলাকার কেউ এদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে সাহস পায় না। তথ্য গোপন রেখে ভিন্ন নামে পরিচালনা করা ও ভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। পাশাপাশি খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞজনেরা। পরিবেশের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
এদিকে, ফসলি জমি রক্ষায় ২০১৩ সালের পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভূক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।
লাইসেন্স ছাড়া ও তথ্য গোপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা ভাটা মালিক এবং মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস কোম্পানিকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। তবে তার ভাই মোহনা ব্রিকসের মালিক মহর আলী সব কাগজপত্র ঠিক -ঠাক আছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
বলধারা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে ওগুলো মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়। তারা ৬ মাস পর উচ্চ আদালতে রিট করে কিভাবে চালাচ্ছেন জানি না। রিটের কোনো কাগজপত্র আমাকে দেখাননি তারা।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, অবৈধ কোনো ইটভাটার কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। নজরে এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।