রঙিন সবজির দেশীয় জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাকৃবি'র গবেষক দল

Posted on January 20, 2025

ময়মনসিংহ ব্যুরো: ইউরোপীয়ান সবজি'র দেশীয় জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ও তাঁর গবেষক দল।

সাধারণত শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ব্রোকলি খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং ভিটামিন ও মিনারেলস এর অন্যতম উৎস। আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই গ্রিন ব্রোকলি চাষ হয়ে আসছে। এবার শীতকালীন রঙিন সবজি হিসেবে স্যাভয় ক্যাবেজ, বেগুনি ব্রোকলি ও জুকিনি/স্কোয়াশের দেশীয় জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাকৃবি'র এই গবেষক দল।

রঙিন ও বিভিন্ন আকার- আকৃতির সবজি গুলো স্বাদে ও গুণে রয়েছে ভিন্নতা। স্যাভয় ক্যাবেজ ও বেগুনি ব্রোকলি নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. হারুন ও রিসার্চ ফেলো মোছা ফাতেমা তুজ জোহুরা।

দেশের আবহাওয়ায় নতুন সবজি স্যাভয় ক্যাবেজ নিয়ে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'ফ্রান্সের স্যাভয় ক্যাবেজ বাংলাদেশে একদম নতুন একটি শীতকালীন সবজি যা সফলতার সাথে চাষে আমরা সক্ষম হয়েছি। সাধারণ বাঁধাকপির পাতাগুলো পরিপক্ক হলে কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু স্যাভয় ক্যাবেজের পাতাগুলো মচমচে হওয়ায় এটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় ও রান্না করে খেলেও সুস্বাদু লাগে। এছাড়াও বিভিন্ন ফাস্ট ফুডে যেমন বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির সাথে খাওয়া যায়।'

বেগুনি ব্রোকলি নিয়ে অধ্যাপক জানান, 'বেগুনি ব্রোকলি দেশে প্রথমবারের মতো চাষের উপযোগী জাত হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে। জাতটি ইংল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এর বৃদ্ধির হার সবুজ ব্রোকলির চেয়ে বেশি। বেগুনি ব্রোকলি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বেগুনি রঙের কারণে এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন, বিদ্যমান। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।'

অধ্যাপক ড হারুন আরও বলেন, এছাড়া লাল বাঁধাকপির জাতও রয়েছে, যা বর্তমানে মাঠপর্যায়ে চাষ করা হচ্ছে। রঙিন হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ সাধারণ (সবুজ) বাঁধাকপির তুলনায় বেশি। এটি মালচিং প্রক্রিয়ায় চাষ করা হয়েছে, যার ফলে পানি সংরক্ষণ করে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে এবং পানির অপচয় রোধ হয়েছে।'

দশটি বিভিন্ন রঙের জুকিনির জাত নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আনিশা নূর মুমু। জুকিনি নিয়ে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'স্কোয়াশ, যা ইতালিতে জুকিনি নামে পরিচিত, ইউরোপীয় দেশগুলোতে পিজ্জা ও পাস্তায় ব্যবহৃত হয়।' অধ্যাপক আরো বলেন, 'গবেষণায় দেখা গেছে, দেশীয় আবহাওয়ায় এর বৃদ্ধি ও বিকাশ অত্যন্ত ভালো। বাজারে সাধারণত সবুজ রঙের জুকিনি বেশি পাওয়া যায়, তবে গবেষণার মাধ্যমে কালো, হলুদ, গাঢ় সবুজ, হালকা সবুজ বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন আকৃতির জুকিনি উৎপাদন করা হয়েছে। মাত্র ৫৫ দিনেই জুকিনি সংগ্রহ করা সম্ভব।'

রঙিন জুকিনির গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ জানান, 'এই গবেষণার অর্থায়নের জন্য আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রঙিন জুকিনি বাছাই এবং জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটি দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।'