শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সারাদেশে ন্যায় সাতক্ষীরায়ও বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এতে করে বড় থেকে শুরু করে শিশুদের বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বিশেষ করে শিশু ও নবজাতকেরা আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়াসহ নানান রোগে।
এ সব কারনে সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে কয়েকগুণ বেড়েছে রোগীর চাপ। এ সব রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ৩০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৪০ জন শিশু। একই অবস্থা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৩৫ জন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র ৫টি শয্যার জন্য বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ২৪ থেকে ৩৫ জন রোগী। ফলে মেঝেতে ঠাঁই নিতে হচ্ছে অনেককে। একই রকম অবস্থা জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা যায়, শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করতে। শিশুরোগীর পাশাপাশি রয়েছে বয়োজ্যেষ্ঠরা।কেউ এসেছে চিকিৎসা নিতে, কেউ এসেছে রোগী ভর্তি করতে, আবার কেউ বা এসেছে রোগীর টেস্ট করাতে।
সদরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা ছফুরা খাতুন বলেন, আমার ঢেড় বছর বয়সী বাচ্চার জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে আজ ৩ দিন সদর হাসপাতালে রয়েছি। প্রথম বেড পায়নি পরে বেড পেয়েছি শিশু রোগীর প্রচুর চাপ হাসপাতালে।
আশাশুনির বকচর গ্রামের রাবেয়া আহমেদ তার ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে গ্রামের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবস্থা খারাপ হলে এখানে ভর্তি করাই।
কলারোয়া থেকে দুই বছর বয়সী সন্তান নিয়ে এসেছেন তার স্বজনরা তার বাবা ইসমাঈল বলেন, সাত-আট দিন ধরে কাশি ও ঠান্ডা কিছুতেই কমছে না। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেছে তায় ভর্তি করেছি।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মো. আবুল বাশার আরমান জানান, শীতের কারণে শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এবং রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আশিক আহমেদ জানান, ঠান্ডা জনিত রোগ সাধারণ শীতকালে বেশি হয়ে থাকে। এ মৌসুমে শিশুদের রক্ষা করতে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তাদের গরম কাপড়, মোজা এবং পরিষ্কার পানি দিতে হবে। বাসি বা খোলা খাবার খাওয়ানো যাবে থেকে বিরত রাখতে হবে।
সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. সামছুর রহমান জানান, শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্করা বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া অন্যতম এসব রোগের মধ্যে। শিশুদের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠরা ঠান্ডা জনিত কারনে অসুস্থ হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালেগুলোতে অন্য সময়ের থেকে এখন রোগীর চাপ বেশি।
তিনি আরও বলেন, এই শীতে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, শীতকালের এই সময়টার প্রতি বছর রোগীর চাপ একটু বেশিই থাকে। শিশুদের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠদের ও আমরা সব সময় ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। গরম পোশাক ও মোজা পরাতে হবে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। শিশু রোগীর পাশাপাশি বড়দের ও আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতিদিন শিশু হাসপাতালে ১৫০ জনের বেশি রোগীকে সেবা দিচ্ছি। তাছাড়া হাসপাতালগুলোতে মোটামুটি শিশু রোগীর চাপ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঠান্ডা জনিত কারনে কোনো শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে এধরণের রোগ সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
সাতক্ষীরায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা, সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা https://corporatesangbad.com/499202/ |