কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সারবহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ জনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ঘাতক আকাশ মন্ডল ইরফানের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে।
কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কোনো প্রকার বেতন ভাতা দিতেন না এমনকি তিনি দুর্ব্যবহারও করতে। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান সবাইকে হত্যা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্য মতে তিনি বলেন, জাহাজের বাজার করার ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিনি ৩ পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, হত্যার দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পড়ে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন ইরফান।
ইরফানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে র্যাব জানায়, ইরফান যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙ্গর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে ট্রলার চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে তিনি পালিয়ে যান।
মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সময় অন্যরা দেখে ফেলায় ইরফান তাদেরও হত্যা করে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
এর আগে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাজে হামলার শিকার আটজনের সঙ্গে ছিলেন ইরফান। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাইমচর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন সুমন।
এদিকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে জাহাজ মালিকের পক্ষে ঢাকার দোহার এলাকার মো. মাহবুব মোরশেদ বাদী হয়ে হাইমচর থানায় ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় মামলাটি করেন। মামলায় খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটের পশ্চিমে মেঘনা নদীর পাড়ে মাঝিরচর এলাকায় থেমে থাকা একটি জাহাজ থেকে গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে আরও ২ জন মারা যান।
নিহত সাতজন হলেন- জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার আজিজুল ও মাজেদুল, রানা কাজী এবং লস্কর সবুজ শেখ। এদের বাড়ি নড়াইল ও ফরিদপুর জেলায়।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মামলার বাদী মাহবুব মুর্শেদ এজহারে উল্লেখ করেন, জুয়েলের গলাকাটা থাকায় সে কথা বলতে পারেনি। ঘটনার বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাতদল দেখলে চিনবে বলে ইশারায় জানায়। তবে জুয়েলের সাথে ইরফান নামে আরেকজন ছিল বলে সে লিখে জানায়। তবে তার ঠিকানা দিতে পারেনি।
ঘটনার পর পুলিশ ওই জাহাজ পরিদর্শনের সময় একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্ট ফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সীল, একটি হেডফোন জব্দ করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নৌ পুলিশ জানিয়েছে, আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, জাহাজে খুন হওয়াদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ মঙ্গলবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন ও নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবে বাবুর্চি রানা কাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাহাজের ৭ জনকে: র্যাব https://corporatesangbad.com/497190/ |