ফিরলো তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা, বাতিল হলো দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন

Posted on December 17, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে বাতিল হলো দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, ফিরলো তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে ফিরলো গণভোটের বিধান।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল হবে না বলেও জানান আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ আইন, ৭ অনুচ্ছেদ হলো এর ধ্রুবতারা। আদালত আরো বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল। যে কারণে এটি সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি হয়ে গেছে।

হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল হবে না।

আদালত আরও বলেন, সংবিধানের মূল কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। সংবিধানের সৌন্দর্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর এই মর্মে জারি করা রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। দীর্ঘ ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হন। এরপর ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম, চার আবেদনকারী রুলে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত হন।

গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

সে সময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ জনের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলে রাষ্টদ্রোহিতার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয় এ সংশোধনীর মাধ্যমে। এছাড়া সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনে বিধান আনা হয়, যা আগে ছিল সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার। এরকম ছোট বড় ৫৫টি সংশোধনী আনা হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে।

এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।

এ সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

পরে এ রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রিট করেন।