স্বাধীনতা ছিনতাই করে এক পরিবারের সম্পদ বানানো হয়েছে : ডা. শফিকুর রহমান

Posted on December 16, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক: জিয়া কে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কেন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা ছিনতাই করে এক পরিবারের সম্পদ বানানো হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান কবে, কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে সেটি এদেশের কারো জানা নেই। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে থাকেন, তাহলে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে শেখ মুজিবুর রহমান নিজের বাসভবনে কেন পাকিস্তানের পতাকা ঝুলিয়েছে?- তৎকালীন ছাত্ররা সেই পতাকা খুলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছিলো।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করে দিয়েছে তাঁরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা যে দেশের আদর্শ ধারণ ও লালন করে সেই দেশেই চলে গেছে। শেখ হাসিনা এদেশে ফিরে এসেছে শুধুমাত্র তার পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের ভূখন্ড ক্ষমতার বিনিময়ে বন্ধক দিতে। শেখ মুজিব কে কারা হত্যা করেছে?- স্বাধীনতার স্বপক্ষের সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে। কেন করেছে? - কারণ শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বেরিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যাত্রা শুরু করেছিলো। তার কন্যাও পরবর্তীতে ভারতের তাঁবেদারি করতে এদেশের আলেম-ওলামাদের, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সাধারণ জনগণকে হত্যা করছে।

এসময় তিনি আরো বলেন, এই পল্টন ময়দানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের বক্তব্য ছিল "বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর"- এই তুমুল ঝড় এদেশের ১৮ কোটি জনগণের বুকের ভিতরের ঝড়। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত ও ন্যায় বিচার করা হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে! সকাল দশটায় সমাবেশ শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কের চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠে বিজয় সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মী ও জনসাধারণের অংশগ্রহণে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিপাত যাক, পরাজিত শক্তি ভারতের দোসর আওয়ামী লীগ নিপাত যাক; জাতীয় স্বার্থে সকল বিভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ। তিনি ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তবেই ১৯৭১ থেকে ২০২৪ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জীবন উৎস্বর্গকারী শহীদদের স্বপ্ন ও চেতনা পূরণ হবে।

সমাবেশে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, ইসলামী ছাত্র শিবির ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি মুজাফফর হোসেন প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বর্গা দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়ে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। ছাত্র জনতার অর্জিত সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে, শেখ হাসিনা ভারতে বসে তার ভারতীয় প্রভুদের ঘাড়ে বসে ষড়যন্ত্র করতেছে। ছাত্র জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় জামায়াত- শিবির এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। নতুন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে তিনি দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।

সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে বিজয় র‌্যালি পল্টন মোড় থেকে প্রেস ক্লাব-হাইকোর্ট-রমনা হয়ে কাকরাইল মোড়ে এসে শেষ হয়। বিজয় র‌্যালীতে কয়েক লক্ষ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।