‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২৪’ উদ্বোধন, ক্ষুধাশূন্য বাংলাদেশের পথে

Posted on December 11, 2024

কর্পোরেট ডেস্ক: বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার বনানীতে অবস্থিত হোটেল শেরাটনে ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশ এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২৪ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদা আখতার মাননীয় উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানটির থিম ছিল “ক্ষুধাশূন্য বাংলাদেশের পথে: বাঁধাসমূহ এবং অতিক্রমের উপায়"। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, শূন্য ক্ষুধা এবং জেন্ডার সমতা নিয়ে অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মিশেল ক্রেজা, হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন, ডেলিগেশনস অব ইউরোপীয় ইউনিয়ন টু বাংলাদেশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইফুল আলম এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২৪ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও প্রকৃত ক্ষুধা শূন্য হতে অর্থাৎ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২-এর প্রতিশ্রুতি পূরণ থেকে অনেক দূরে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জেন্ডার বৈষম্যের কারণে এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে থাকে।

এবছর বাংলাদেশের জিএইচআই স্কোর ১৯.৪। ক্ষুধার তালিকায় মধ্যম পর্যায়ের দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অগ্রগতি। কিন্তু একই সাথে এই স্কোর এটাও বোঝায় যে, অপুষ্টি দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সামগ্রিক কৌশলের প্রয়োজন। মূলত চারটি সূচকের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের GHI স্কোর নির্ধারিত হয়েছে:
• জনসংখ্যার ১১.৯% অপুষ্টিতে ভুগছে।
• পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ২৩.৬% খর্বকায়।
• পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ১১.০% শারীরিকভাবে দুর্বল।
• পাঁচ বছর বয়সের আগে ২.৯% শিশু মারা যায়।

এবছরের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, জেন্ডার বৈষম্য কীভাবে মানুষকে তার সম্পদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং সম্পদ গ্রহণে বাঁধা দেয়। এইরকম অবস্থা শেষ পর্যন্ত মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করার সক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।

জলবায়ু বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের অন্যতম অনুঘটক হলো জেন্ডার জাস্টিস। এটি অর্জন করতে হলে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে আইনি অধিকার, আনুষ্ঠানিক শর্তাবলী এবং অনানুষ্ঠানিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, যা প্রায়ই পরিবার ও সমাজে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।

২০২৪ সালে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী এবং খাদ্য-অধিকার নির্দেশিকার ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে, GHI-এর সহলেখকরা; যথা, ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে (WHH), কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ল অব পিস অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট (IFHV) - ক্ষুধা মোকাবিলার জন্য আরও কার্যকর এবং সুসংগত নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি দেশের দায়বদ্ধতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য জেন্ডার নিরপেক্ষতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সমন্বিতভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।

জিএইচআই ২০২৪-এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদার, নীতিনির্ধারক, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণের কার্যকর পথ খুঁজে বের করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
"বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এর দিকে তাকালে দেখা যায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রায় ১২% জনসংখ্যা অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ২৩% এর বেশি শিশু খর্বকায়। ক্ষুধার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এই বছর ক্ষুধা-চক্রকে ভাঙতে আমরা কমিউনিটি-ভিত্তিক সমাধান, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

আমাদের যুব এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোকে খাদ্য ব্যবস্থা প্রণয়ন ও পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে ক্ষমতায়িত করতে হবে। যাতে তাদের কণ্ঠস্বর এমন একটি ভবিষ্যত গড়ে তোলে যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। একসাথে, আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত, টেকসই এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি।" - পঙ্কজ কুমার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে বাংলাদেশ।

“এবারের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রতিবেদন কেবলমাত্র ক্ষুধার প্রবণতা ও দেশের স্কোর নিয়েই মূল্যায়ন করেনি বরং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও শূন্য ক্ষুধার জন্য জেন্ডার বৈষম্য মোকাবিলার গুরুত্ব নিয়েও গভীর বিশ্লেষণ করেছে। বাংলাদেশ তাদের জিএইচআই স্কোরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, যদিও ক্ষুধার মাত্রা এখনও মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে,” বলেছেন মনিষ কুমার আগরওয়াল, কান্ট্রি ডিরেক্টর-কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, বাংলাদেশ।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “খাদ্য নিরাপত্তা ও অপুষ্টির কারণে সাধারণত নারী ও কন্যা শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা আবহাওয়ার চরম অবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবেও বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। জেন্ডার নিরপেক্ষতাকে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর জন্য আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া থেকে অনানুষ্ঠানিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলা এবং খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানাই। যাতে সব মানুষ পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।

এখন আমাদের সবার সময় এসেছে শূন্য ক্ষুধার জন্য কাজ করার এবং এমন একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক বিশ্ব গড়ার যেখানে মানুষ পর্যাপ্ত খাবারের অধিকার নিয়ে স্বাস্থ্যকর ও কর্মময় জীবনযাপন করতে পারে,” জোর দিয়ে বলেন, মনিষ কুমার আগরওয়াল, কান্ট্রি ডিরেক্টর-কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, বাংলাদেশ।

নোটস টু এডিটর
গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (GHI) একটি পিয়ার রিভিউড বার্ষিক প্রতিবেদন, যা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে যৌথভাবে প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটি বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় স্তরে ক্ষুধার পরিমাণ পরিমাপ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। জিএইচআই চারটি মূল সূচকের ভিত্তিতে দেশগুলোকে ranking করে।

  1. অপুষ্টি (জনসংখ্যার মধ্যে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব),
  2. শিশু মৃত্যুহার (পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যু),
  3. শিশু ক্ষয় (পুষ্টিহীন বা অত্যধিক দুর্বল শিশু), এবং
  4. শিশু খর্বকায়তা (উচ্চতার তুলনায় শিশুদের শরীরের কম ওজন)।
    এই সূচকগুলো ক্ষুধার বিস্তৃতি এবং তীব্রতা বুঝতে একটি সামগ্রিক ধারণা প্রদান করে।

ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে- ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে হচ্ছে জার্মানির বৃহত্তম বেসরকারি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলির একটি এবং এর কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই। ‘ক্ষুধামুক্ত ২০৩০’ এর জন্য আন্দোলন করছে সংস্থাটি। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ৭২ দেশের ১১,৪৯৮ টিরও বেশি ওভারসিজ প্রকল্পে ৪.৭৫ বিলিয়ন ইউরো তহবিলের যোগান দিয়েছে। ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে কাজ করে ‘আত্মসহায়তার জন্য সাহায্য করা’ এই মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে, যা মূলত দ্রুত দুর্যোগ সহায়তা থেকে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদাঁড় হয়ে।

https://www.welthungerhilfe.org/

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড- কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড হল একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন যারা মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে নিবেদিত এবং বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলি থেকে চরম দারিদ্র্য পুরোপুরি নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হল, চরম দারিদ্র্যসীমায় বাস করা লোকদের সাহায্য করা, তাদের জীবনে ব্যাপক উন্নতি সাধন করা। এই লক্ষটি অর্জনের জন্য কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা, জরুরী পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়া এবং উন্নয়ন ও অ্যাডভোকেসি কাজের মাধ্যমে দারিদ্র্যের মূল কারণগুলিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার চরমে বসবাস করা লোকদের জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন নিশ্চিত করতে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড কাজ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে মিলিতভাবে।
www.concern.net