রাতের আঁধারে নিয়োগ অবৈধ ১৩৭: মোবারকগঞ্জ চিনিকল ছাত্রলীগ-যুবলীগ পুনর্ববাসন কেন্দ্র!

Posted on December 10, 2024

আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: দক্ষিনাঞ্চলের ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি (মোচিক) এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মোবারকগঞ্জ চিনি কলে অবৈধ ভাবে ১৩৭ জন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীকে দৈনিক হাজিরায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দান করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও আ’লীগের সাবেক এমপি আনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম রসুল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে অনভিজ্ঞ এ সব দলীয় ক্যাডারদের শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগায়। তবে এসব শ্রমিক কর্মচারীদের কোন নিয়োগপত্র নেই বলে অভিযোগ।

এদিকে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের আবারও কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মিরটির এমডি সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে মোবারকগঞ্জ চিনিকল এলাকায়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩-২০২৪ আখ মাড়াই মৌসুমে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে মিলটির বিভিন্ন বিভাগে ১৩৭ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, মিলের এমডি সাইফুল আলম ও মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল মাথ প্রতি চার লাখ টাকা করে নিয়ে শ্রমিকের তালিকা চিনিকল কর্তপক্ষের কাছে প্রদান করেন। এসব শ্রমিকের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসেন, সহ-সভাপতি মিরাজুল ইসলাম ও কালীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর সজলসহ অধিকাংশই ছাত্রলীগ যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ৫ আগস্ট হাসিনার পতন ঘটলে আত্মগোপনে চলে যায় শ্রমিক ইউনিয়নের দুর্নীতিবাজ সভাপতি গোলাম রসুলসহ অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অনেক শ্রমিক। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের আখ মাড়াই মৌসুম উদ্বোধনের আগেই। কথিক জনবল সংকটের কথা বলে পলাতক যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাজে নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন মোচিকের এমপি সাইফুল আলম।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এসব শ্রমিকরা ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চাপ দিয়ে কাজে যোগদানের চেষ্টা করলে সাধারণ শ্রমিকরা বিরোধিতা করে তাদের ধাওয়া করে। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

মিলটির সাধারণ শ্রমিক ইলিয়াস রহমান মিঠু জানান, বিগত সরকারের সময়ে একদম অবৈধভাবে ১৩৭ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। নূন্যতম এসকল শ্রমিকদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়নি। সাবেক এমপি আনার ও তার বন্ধু গোলাম রসুল টাকার বিনিময়ে এ সকল শ্রমিকদের নিয়োগ দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। আর এই অনৈতিক কাজে সহায়তা করেন মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

শ্রমিক জবেদ আলী জানান, গত মৌসুমে নিয়োগ পাওয়া ১৩৭ জনের অধিকাংশই ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের আবারও কাজে লাগাতে চাইলে সাধারণ শ্রমিক তাদের প্রতিহত করবে। ফলে এ ঘটনা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে সুগার মিলটির ব্যবস্থপনা পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, টাকা নিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করার বিষয়টি সঠিক না। যে ১৩৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেটি দৈনিক হাজিরায়। তাদের কোন নিয়োগই নাই। তাদের পুনরায় নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তারা মিলের মধ্যে কাজের দাবীতে জড়ো হচ্ছে বলে জানতে পারছি।