বিলুপ্তপ্রায় ৬৪ প্রজাতির মধ্যে ৪০টির সফল প্রজনন সম্পন্ন, চাষাবাদের আওতায় ১২ প্রজাতির মাছ

Posted on December 4, 2024

ময়মনসিংহ ব্যুরো: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা খাবার টেবিলে বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনতে গবেষণা শুরু করেছেন। কাজ শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয়েছে ৪০ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন। এরমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ১২ প্রজাতির মাছ চাষাবাদের আওতায় এসেছে।"এক কথায় পাতে ফিরছে বিলুপ্তপ্রায় মাছ।"

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ।আর এদেশের মিঠা পানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতি আহরণসহ নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় ৬৪ প্রজাতির মাছ ছিল বিলুপ্তপ্রায়।

বিএফআরআই সূত্রে জানা যায়, দেশীয় ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছোট মাছের প্রাপ্যতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। ফলে বিজ্ঞানীদের গবেষণার ধারাবাহিকতায় পাবদা, গুলশা, টেংরা, কৈ, মাগুর, শিং, গুজি আইর, দেশি সরপুঁটি, জাতপুঁটি, বাটা, বালাচাটা, কুচিয়া, কুর্শা, খলিশা, ভেদা, গুতুম, ঢেলা, গজার, ফলি, চিতল, গনিয়া, মহাশোল, বৈরালি, ভাগনা, আঙ্গুস, বাতাসি, পুঁইয়া, কাকিলা, পিয়ালী, রাণীসহ ৪০ মাছের সফল প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে হ্যাচারিতে পাবদা, গুলশা, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, পাবদা, গুলশা,বৈরালি মাছসহ ১২ প্রজাতির মাছ ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে মাঠ পর্যায়ে চাষও হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এগুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এদের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রাচীনকাল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহজলভ্য পুষ্টির অন্যতম উৎস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে অনেক মাছ বিলুপ্তির আশংকায় চলে যায়। ফলে মাছগুলোকে খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে নিরলস গবেষণা চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে অনেক মাছের সফল প্রজনন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে গবেষকরা দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করেছে। শুধু তাই না- দেশে প্রথমবারের মতো বিএফআরআইয়ে দেশি মাছের 'লাইভ জিন ব্যাংক' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই লাইভ জিন ব্যাংকে ৮৮ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে এ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র বলেন, আগে শুধুমাত্র ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও বর্তমানে ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিলুপ্তপ্রায় অনেকগুলো মাছ চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এছাড়া নদ-নদী, হাওর ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে মাছের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তির আশংকায় থাকা সব দেশীয় মাছ পুনরুদ্বার করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।