নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের প্রবেশদ্বার হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের শুরুতে অবস্থিত ভাষা শহিদ রফিক সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই টোল আদায়ে চলছে নানা ধরনের নাটকীয় ঘটনা। চলছে অন অফ কার্যক্রম। টোল আদায় এক পক্ষ বন্ধ করছে, অপর পক্ষ চালু করছে। আর বর্তমানে বন্ধ থাকা টোল অবৈধভাবে চালু করতে বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন একাধিকবার চেষ্টা করছেন বলেও সত্যতা মিলেছে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
জানা যায়, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সতুটি ২০০০ সালের ২৬শে জানুয়ারি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তখন থেকেই শুরু হয় টোল নেয়া। মাঝে ২০১৩ সালে তিন চাকার যানবাহনের টোল আদায় বন্ধ হলেও বছর না যেতেই আবার তা শুরু হয়।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই সেতুতে টোল বন্ধ করে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু এর কিছুদিন পর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটি অসাধু চক্র সেতুতে টোল আদায় শুরু করে। খবর পেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ জনতা ও স্থানীয়রা টোল প্লাজার কাউন্টারে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। এরপর কিছুদিন টোল আদায় বন্ধ থাকলেও গত ২৮ নভেম্বর থেকে ওই কুচক্রী মহল আবারও অবৈধভাবে টোল আদায় শুরু করে। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে জানালে ২৯ নভেম্বর রাতে সেনাবাহিনী টোল প্লাজায় আকস্মিক অভিযান চালায়। এ সময় অবৈধভাবে টোল আদায়কারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে ৩০ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাতে পালিয়ে যাওয়া চাঁদাবাজরা আবারও টোল আদায় শুরু করেছে। খবর পেয়ে এ দফায়ও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রশাসনকে জানালে শনিবার দুপুর নাগাদ সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ জনকে আটক করে পুলিশে দিয়ে টোল প্লাজা বন্ধ করে দেয়। এরপর শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অবৈধ টোল আদায়ের জন্য নবনির্মিত কক্ষ ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ সময় অবৈধ টোলের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে টোল আদায় চলছে।
টোল আদায়কারীরা জানান, আওয়ামীলীগ নেতা লুৎফর নামে এক ব্যক্তি টোলের ইজারার নিয়েছিলেন। লুৎফর ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলার আসামি হয় এবং পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনে পর কয়েক দফায় অবৈধ টোল বন্ধ হলেও বারবার রাজনৈতিক ছত্রছাত্রায় একদল কুচক্রী মহল তা আবারও শুরু করার পাঁয়তারা করছে, যাতে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ।
অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিনের কাছে মোবাইলে ফোনে জানতে চাইলে তিনি দায় স্বীকার করে বলেন, লুৎফরের অবর্তমানে আমার নির্দেশে টোল ওঠছে। আমিই টোল আদায় করার জন্য বলেছি। ভায়া হয়ে টোল আদায় বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বৈধভাবে টোল আদায় করছেন। যদিও কিভাবে এটি বৈধ সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।