শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ রেখে এমপি'র সভা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: চার শতাধিক শিক্ষার্থীর ৫টি বিষয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ফাজিল মাদরাসা মাঠে নেতাকর্মী ও সুফলভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ। সভায় উপস্থিত লোকদের বসার জন্য ক্লাসরুমের শিক্ষার্থীদের বসার ব্রেঞ্চও সভায় নিয়ে নেওয়া হয়।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার নলকা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জে মুরাদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এরআগে, সকাল ৮টার দিক থেকেই সভা স্থলে উপস্থিত হতে থাকেন সুফলভোগীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন স্থানীয় নলকা ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানে এমপি আসেন দুপুর ১২ টার দিকে এবং সভাটি শেষ হয় দুপুর ২টার পরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায,মুরাদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এমপি'র মতবিনিময় সভায় কয়েক হাজার সুফলভোগী ও নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বড় করে তৈরি করা হয় একটি মঞ্চ। সামনে কয়েক হাজার চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে সুফলভোগী ও নেতাকর্মীদের।

মঞ্চে নলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক ও রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন।'

মুরাদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ১০টার পরে সভা শুরু হলেও সকাল ৮টা থেকেই লোকজন সভায় আসতে থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮ বিষয়ের ক্লাস হলেও আজ মাদরাসায় এমপি সাহেবের প্রোগ্রাম থাকায় সকাল ৭টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ৩ বিষয়ের ক্লাস হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পরে সকল ক্লাসরুম থেকে শিক্ষার্থীদের বসার সব ব্রেঞ্চও নিয়ে গেছে তারা। ক্লাসরুমের সামনে সভা হচ্ছে, অনেকগুলো মাইক বাঁজছে, হাজার হাজার লোক, ব্রেঞ্চও নাই, এভাবে তো আর ক্লাস হয় না। আজ ক্লাস হবেনা বুঝেই সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ক্লাসের টাইম দেওয়া হয়।

মুরাদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবারে একটা মিটিং করে রেজুলেশন করেছি। রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপি'র সভার জন্য আজ (১৬ অক্টোবর) মাদরাসায় ক্লাস সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রেখে সভার অনুমতি দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিকিছু জানার দরকার হলে সভাপতির কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।

এ ব্যাপারে মুরাদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সভাপতি ও নলকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউসার হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তাই অধ্যক্ষকে বলেছিলাম আমার বরাবর একটা আবেদন দিতে এবং মর্নিং শিফটে ক্লাস চালাতে। তবে যেহেতু এতবড় প্রোগ্রাম তাই পাঠদানে একটু সমস্যা তো হবেই।

মর্নিং শিফটের দুই ঘন্টায় মাত্র ৩টা বিষয়ের ক্লাস নেওয়া ও ৫টি বিষয়ের ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বসার ব্রেঞ্চ পর্যন্ত বের করে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি।

সভার আয়োজনকারী নলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সভার সভাপতি মো. আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, এ তো বড় প্রোগ্রাম করার জায়গা নাই। জায়গা না পাওয়ার কারণে মাদ্রাসা মাঠে সভা করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রোগ্রাম শুরুর আগে ক্লাস হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রেখে সেখানে কোনও সভা সমাবেশ করার নিয়ম নেই। বিষয়টি আমি জানি না, তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।

সভার বিশেষ অতিথি রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় বলেন, আমার মতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আগে, সভা সমাবেশ পরে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ রেখে সভা করা টা ঠিক হয়নি। জাতি শিক্ষিত হলে দেশও এগিয়ে যাবে বলেও যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য রায়গঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ') আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ জানান, সেখানে সকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয়েছে এবং সভার পরেও সেখানে ক্লাস হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা ভালো একটা প্রোগ্রাম করেছি, তারা সরকারের সুফল ভোগ করছেন আমরা তাদের সঙ্গেই মতবিনিময় করেছি, এটা নেগেটিভ করে দেখার সুযোগ নেই।

এমপি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের খাবারও দিয়েছি। সব ক্লাস বন্ধ ছিলনা, কিছু ক্লাস হয়েছে। তাহলে ক্লাস বন্ধ করে সভা করা হয়েছে এটা সঠিক নয়। সভা তো শুরু হয়েছে দুপুর ১২ টায়, তার আগে অনেক ক্লাস হয়েছে। আর এখানে ছাড়া তো বড় ভালো কোনও জায়গা নেই।

এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বসার ব্রেঞ্চ সভায় এনে বসতে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রোগ্রাম শেষ হওয়া মাত্রই গ্রাম পুলিশদের দিয়ে ব্রেঞ্চগুলো ক্লাসরুমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সভার বিষয়টি নেগেটিভ করে দেখা টা ঠিক হচ্ছে না।