প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমি আশাহত হয়েছি : মির্জা ফখরুল

Posted on November 18, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ১০০ দিন উপলক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। অনেকেই আশান্বিত হয়েছেন। আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটি রূপরেখা দেবেন।’

সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির উদ্যোগে ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে’আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। এর কারণ নির্বাচন দিলে অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক সেটা বিষয় নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। রোববার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমি আশাহত হয়েছি। ধারণা করেছিলাম, তিনি তার প্রজ্ঞা দিয়ে একটা নির্বাচনের রূপরেখা দেবেন। ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধা সৃষ্টি করিনি। বরং আপনাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সমর্থন দিচ্ছি।’ কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা সচিবালয়ে বসে আছেন। তারা তো আপনাকে সংস্কার করতে দেবেন না। তাই সংস্কার দৃশ্যমান করুন। তবুও মানুষ মেনে নিচ্ছে। তারা ভাবছে, আপনি একটা সুন্দর জিনিস দেবেন।’

তিনি আরো বলেন, আমরা অবশ্যই সংস্কার চাই। তবে এমন সময় যেনো না নেয়া হয়, যাতে জনগণের ভেতর ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। আমরা বলেছি, একজন দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। পার্লামেন্ট হতে হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। বিচার বিভাগের সংস্কারের কথা আগেও বলেছি আমরা। তারেক রহমানের কথা দেশবাসী ও তরুণরা গ্রহণ করছেন।

ছাত্রদের সঙ্গে কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, এই কথা বলার অধিকার তাদের আছে। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমরা হিসাবি। হিসাব করি কোন কাজটি করা যাবে, কোনটি করা যাবে না। কোনটা এখন করা ঠিক হবে, কোনটা এখন করা ঠিক হবে না। সেই কারণে আমরা বলছি, দ্রুত নির্বাচন হওয়াটাই এ দেশের জন্য, জাতির জন্য মঙ্গল। এ কথা বলছি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই ধরনের সরকার যত দিন বেশি থাকে, ততই সমস্যা তৈরি হবে। এর কারণ হলো এর তো ম্যান্ডেট নাই। এ তো নির্বাচিত সরকার নয়, এই সরকারের পেছনে শক্তিটা কোথায়?’

বিএনপি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার চান দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘এটি এত বেশি সময় নেওয়া উচিত নয় যে মানুষ সন্দেহ করতে শুরু করে যে আপনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছেন। অতীতে আমাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। মঈনুদ্দিনের সরকার ক্ষমতায় থেকে কিংস পার্টি গঠন করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতায় থেকে দল করবে, কিন্তু মানুষ এটি মেনে নেয়নি। তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’

মাওলানা ভাসানী ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক নেতা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভাসানী কিংবদন্তি, তিনি বিরাট বটগাছ। তার অভ্যুত্থান একদম সাধারণ পরিবার থেকে। তার ভেতরে একটা আগুন আছে। সমগ্র ভারতবর্ষে পাকিস্তান আন্দোলনের জন্য তিনি কাজ করেছেন। সর্বত্র তার বিচরণ ছিল। তার আদর্শ আজকের রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। চাপিয়ে দেয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল তার আন্দোলন।

ফখরুল বলেন, ‘আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শেষ বর্ষের ছাত্র, তখন পল্টনে মাওলানা ভাসানী ডাক দিয়েছিলেন। সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু হাজার হাজার লোক হয়েছিল। আমরা কী করে তাকে ভুলবো? তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পিজিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, সে সময় তিনি জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন তুমি তরুণ; তুমি সৎ; তুমি পারবে।’

‘তাই আসুন আমরা মাওলানা সাহেবের আদর্শ ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, এ দেশের মানুষ পারবে’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।