কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়। শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমপদমার্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের সারা বাংলাদেশে বিশেষ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এই ক্ষমতা প্রজ্ঞাপনের তারিখ থেকে ৬০ দিনের জন্য অর্পণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারা অনুযায়ী এই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসব ধারা অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
তবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের।
আইনের এসব ধারা অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যেসব ক্ষমতা রয়েছে-
ধারা ৬৪
নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তিনি গ্রেপ্তার ও জামিন দিতে পারবেন। অর্থাৎ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়ায় এখন দায়িত্ব পালনের সময় সেনা কর্মকর্তাদের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
ধারা ৬৫
অধিক্ষেত্র এলাকায় কাউকে গ্রেপ্তার বা গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিতে পারবেন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। অর্থাৎ, সেনা কর্মকর্তাদের সামনে অপরাধ সংঘটিত না হলেও, সন্দেহভাজন অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
ধারা ৮৩
অধিক্ষেত্রের বাইরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবেন সেনা কর্মকর্তারা। আর ৮৪ ধারা অনুযায়ী, অধিক্ষেত্রের বাইরে পরোয়ানা কার্যকর করতে পুলিশকে নির্দেশও দিতে পারবেন। আর ৯৫ ধারা অনুযায়ী, পরোয়ানা বা ডকুমেন্টস বা চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পোস্টাল বা টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করতে পারবেন।
ধারা ১০০
বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যেকোনো স্থানে তল্লাশি করতে পারবেন। অর্থাৎ, কাউকে অপহরণ বা জোর করে কোথাও আটকে রাখার খবর পেলে সেনা কর্মকর্তারা সেখানে তল্লাশি করতে পারবেন।
ধারা ১০৫
সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, তার (ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) উপস্থিতিতে যেকোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।
ধারা ১০৭
শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১০৯
ভবঘুরে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১১০
অভ্যাসগত অপরাধীর কাছ থেকে সদাচরণের জন্য মুচলেকা গ্রহণ করতে পারবেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
ধারা ১২৬
সদাচরণের নিশ্চয়তা প্রদান করা ব্যক্তির মুচলেকা বাতিল করে সমন বা গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট জারি করতে পারবেন।
ধারা ১২৭
সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। ফৌজদারি কার্যবিধির এই ধারা অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাঁচ বা তার অধিক ব্যক্তির বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এই ধারা অনুযায়ী সেনা কর্মকর্তারাও যেকোনো ধরনের বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পারবেন।
ধারা ১২৮
সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে বেসামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ, চাইলে তারা পুলিশ বা অন্যান্য বেসামরিক বাহিনীর সহায়তা নিতে বা নির্দেশ দিতে পারবেন।
ধারা ১৩০
সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে প্রয়োজনীয় সেনা কমান্ডিং অফিসারদের দায়িত্ব দিতে পারবেন।
ধারা ১৩৩
স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করতে পারবেন।
ধারা ১৪২
এই ধারার আওতায় জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের।
উল্লিখিত ক্ষমতা ছাড়াও যেকোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য সরকার এবং সেই সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এই আইনের অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার উপস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধ বা ঘটনাস্থলে তার বা তার সামনে উন্মোচিত হওয়া অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারেন। তবে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে তা দুই বছরের বেশি হবে না।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল আরও ২ মাস https://corporatesangbad.com/492350/ |