বিগত পাঁচ অর্থবছর ভোমরা স্থল বন্দরে ৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়

Posted on November 13, 2024

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনটি উল্লেখযােগ্য পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। বিগত ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২৩ -২০২৪ পাঁচটি অর্থ বছরে ভোমরা শুল্ক স্টেশন থেকে সরকারের ৩৬২৫ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৬৯ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি গুড়া দুধ ছাড়া বাকি সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এই বন্দরে রাজস্ব আদায়ের পরিমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যাবে বলে প্রত্যাশা বন্দর সংশ্লিষ্ঠদের।

ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টর্মস স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৯ -২০২০ অর্থবছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৮৩.৪০ কোটি টাকা, ২০২০ -২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৭৬০.৬৫ কাটি টাকা, ২০২১ -২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৭৪১.৮৩ কোটি টাকা, ২০২২ -২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৬৩১.৭২ কাটি টাকা এবং ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৯০৭.৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৬৯ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা।

বন্দর সূত্রে আরও জানায়, ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পরিমাপ করায় রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে বাড়ছে সরকারর রাজস্ব আদায়। ফলে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭৩.৪৮ কাটি টাকা। সম্প্রতি ভোমরা বন্দর দিয়ে গুড়াদুধ ছাড়া সকল ধরনের পণ্যের আমদানির অনুমোদন পাওয়ায় এ বন্দরে আসতে শুরু করেছেন অন্য বন্দরের ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করলে এই বন্দর থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে দাবী কাস্টম কর্তৃপক্ষের।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন দাবির মুখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যায় ভোমরা বন্দরে গুড়া দুধ ব্যতিত আমদানিকৃত সকল পণ্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর।

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারত ঘোজাডাঙ্গা কাস্টর্মস থেকে কোলকাতার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার হওয়ায় পণ্য পরিবহন খরচে সাশ্রয় করতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দর ব্যবহার বেশি আগ্রহী। সব ধরনের পন্য আমদানির সুযোগ সষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন ভোমরা বন্দরের দিকে বেশি ঝুকছেন।

ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হাসান জানান, অন্তবর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছে কাস্টর্মস প্রশাসন। কানা অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকায় এখানে তৈরি হয়েছে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ।

ভোমরা বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পরে এই বন্দরের রাজাস্ব আদায় বেড়ে যাবে কয়েক গুন। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।

ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, শুরুতেই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই বন্দরে কিছু বাধ্যবাধকতা ছিলো। কিন্তু চলতি বছরের ২৯ আগস্ট ভোমরা বন্দর দিয়ে গুড়া দুধ ব্যতিত সকল পণ্য আমদানির অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। যার ফলে সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ সষ্টি হওয়ায় রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরের পরই সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের অবস্থান। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্য পণ্য, আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। পূর্নাঙ্গ কাস্টমস হাউজ চালু হলে ভোমরা বন্দর দিয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুন বেড়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। তা ছাড়া ভোমরা বন্দরে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করেত ডিজিটাল ওয়েবীজ স্কেলে পণ্য পরিমাপ করা হয়। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই, শুল্ক গোয়েন্দাসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তপক্ষের উপস্হিতিতে ফলের ট্রাকসহ সকল পণ্য পরিবহনের ওজন ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়। যার কারনে রাজস্ব আদায়ের পরিমান আগের তুলনায় বেড়েছে।

ভোমরা স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক মো রুহুল আমিন (ট্রাফিক) জানান, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়প এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ভোমরা স্থল বন্দরে মাত্র ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখান ইয়ার্ড ও ট্রান্সশিপমট ইয়ার্ড নির্মাণ করে ২০১৩ সালের মে মাসে পূর্ণাঙ্গভাবে ভোমরা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীত বন্দরের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসেনের জন্য একটি ডোরমেন্টারি ভবন নির্মাণ করা হয়। সাম্প্রতি ভোমরা বন্দর দিয়ে গুড়া দুধ ব্যতিত সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন দেয় এনবিআর কর্তৃপক্ষ। ভোমরা শুল্ক স্টেশনটিকে একটি পূর্নাঙ্গ কাস্টমস হাউজ হিসাব ঘোষণার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে । একই সাথে শুল্ক বিভাগ কর্তৃক প্রয়োজনীয় অবোকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৪ জুলাই থেকে ভোমরা স্থল বন্দরে বদর-ই- পের্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে ভোমরা বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম এখন ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে সম্পন করা হচ্ছে । যেহেতু খুব শীঘ্রই ভােমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউজ হিসাবে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ।সে লক্ষ্যে ভোমরা স্থল বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্থল বন্দর কর্তপক্ষ বন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নেরর লক্ষ্যে ১১শ কাটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্য প্রায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ সেখান বালু ভরাটের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাকি ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণর জন্য সরজমিনে যেয়ে তালিকা (ফিল্ডবুক) প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা
হয়।

শীঘ্রই অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে সেখান উন্নতমানর ওয়্যার হাউজ, শেড, ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, পর্কিং ইয়ার্ড, আন্তর্জাতিক মানের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য প্রয়াজোনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। আগামী ২/৩ বছরর মধ্যে এগুলা সম্পন করা হলে ভোমরা বন্দরের আমুল পরিবর্তন আসবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। একই সাথে বছরে কয়েক হাজার কেটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।