৬ নারী ফুটবলকন্যাদের অর্জনের আনন্দে ভাসছে কলসিন্দুর

Posted on November 3, 2024

মোঃ আজিজুর রহমান ভূঁঞা বাবুল: টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের পতাকা উজ্জ্বল করে আসা বাংলার বাঘিনী কন্যাদের দলের ৬ জন নিয়মিত খেলোয়ারের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত কলসিন্দুর এলাকায় হলেও তাদের এমন কৃতিত্বে ভাসছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষজন। সেইসাথে ফুটবলকন্যাদের জয়ে আনন্দিত মেয়েদের অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী।

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফুটবল খেলায় বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিয়েছিল ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছয়জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থী চারজন এবং দুইজন বর্তমান শিক্ষার্থী।

সাফজয়ী এই ফুটবলাররা হলেন- শামছুন্নাহার সিনিয়র, শামছুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা, সানজিদা, শিউলি আজিম ও মারিয়া মান্দা। তাদের মধ্যে তহুরা ভুটানের বিপক্ষে তিন গোল ও ভারতের বিপক্ষে দুই গোল করে সৃষ্টি করেছে অনন্য রেকর্ড। এছাড়া শামসুনাহার জুনিয়র ১ গোল দিয়েছেন। তবে ফাইনাল খেলায় সানজিদা ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন বাকি পাঁচজন।

মেয়েদের এই বিশ্বজয়ী অর্জনে দেশের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলসিন্দুর গ্রামটির নাম ময়মনসিংহ ছাড়াও এখন সারা দেশে অতি পরিচিত। তাই মেয়েদের এমন অর্জনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে ভাসছে কলসিন্দুর গ্রামসহ পুরো ধোবাউড়া উপজেলা ও ময়মনসিংহবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ মহানগর থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামটি উন্নয়ন ও শিক্ষাদীক্ষায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এই গ্রামে মুসলমান ও হিন্দুদের পাশাপাশি বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক লোকজন। মেয়েদের ফুটবল খেলাকে ঘিরে গত বুধবার শুরু হয় পুরো উপজেলায় সাজ সাজ রব। ফলে ওইদিন বিকেল থেকে টেলিভিশন এবং মোবাইলের দিকে নজর ছিল সব বয়সী মানুষের। বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি হাট-বাজার ও দোকানপাটেও টিভির সামনে ছিল উৎসুক মানুষের চোখ। ফাইনালে জয়ী হওয়ায় মেয়েদের এই অর্জনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে মেয়ের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনে আনন্দে আত্মহারা সাফজয়ী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তারের বাবা মো. লিয়াকত আলী।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো খেলায় নেপালকে হারিয়ে ফাইনাল জিতেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এটা দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি এই দলের একজন খেলোয়াড়ের বাবা হিসেবে অনেক গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় মেয়েরা খেলাধুলা করে বলে পাড়া-প্রতিবেশীরা নানা বিরূপ-মন্তব্য করতেন। এখন সবার মুখে মুখে সানজিদার প্রশংসা। মেয়ের জন্য আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। এলাকার অনেক নারী ফুটবলার সানিজদাকে অনুসরণ-অনুকরণ করে। সব জায়গাতেই আমাদের মূল্যায়ন বেড়েছে। এটা আগে পেতাম না।

একই ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তহুরার বাবা মো. ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, সাফ জয়ের খবর পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এলাকার সবাই খুব খুশি। এখন সবাই মেয়েদের অপেক্ষায় আছে।

দেশেরজন্য কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের বিষয়ে সানজিদা, মারিয়া মান্দা ও তহুরার জানান, দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো লাগছে। সামনে হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। নিজ এলাকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সানজিদা বলেন, শুরু থেকেই আমাদের পাশে থাকায় এবং ভবিষ্যতেও সবার সাপোর্ট চাই, দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।

ধোবাউড়া উপজেলার মুক্তাগাছা গ্রামের বাসিন্দা মেসিখ্যাত শারাবান তহুরার হেট্রিকে ফাইনালে উঠে নারী ফুটবল দল।

শারাবান তহুরা জানান, সিনিয়র টিমে প্রথম হ্যাট্রিক করতে পারায় খুবই ভালো লাগছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সবাই প্রতজ্ঞাবদ্ধও ছিলাম।

এই দলের মারিয়া মান্দার বাড়ি নেতাই নদীর পাড়ে মন্দিরঘোনা গ্রামে। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় বাড়ির সামনের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিবারের লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি রাস্তাঘাট মেরামতের দাবি জানান।

কলসিন্দুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জবেদ তালুকদার বলেন, এই মেয়েরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের, এটা খুবই গর্বের। ভবিষ্যতে এরা বিশ্ব জয় করবে।

কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের কোচ মো. জুয়েল সরকার বলেন, নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলের ছয়জনই কলসিন্দুর এলাকার সন্তান। আমাদের মেয়েরা জাতীয় দলে খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে, এটা অনেক আনন্দের। মেয়েদের এমন অর্জনে আমিসহ দেশবাসী গর্বিত।