নিজস্ব প্রতিবেদক : নীরিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পুঁজিবাজারকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে তাই সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে বলে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএসইসির সাথে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর শীর্ষ প্রতিনিধিদের একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর আগারগাঁও-এ বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বিএসইসি’র কমিশনার মোঃ আলী আকবর, বিএসইসি’র কমিশনার ফারজানা লালারুখ, বিএসইসি’র কর্মকার্তারা এবং আইসিএবির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন, সাবেক সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এমবিএম লুৎফুল হাদী, সিইও শুভাশীষ বোস উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি মেধাভিত্তিক পুঁজিবাজার গড়তে কাজ করছে। নীরিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে তিনি নিরীক্ষা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিজ অব্স্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
তিনি পুঁজিবাজারকে অর্কেস্ট্রার সাথে তুলনা করে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এক্সচেঞ্জ, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্ততাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহসহ সকল অংশীজনদের নিয়ে পুঁজিবাজার কাঠামোর সকলকে নিয়েই ও সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বাজার পরিচালিত হয়। দেশের পুঁজিবাজারকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে তাই সকলকে দায়িত্বশীল ও কর্তব্য পরায়ন হতে হবে। বাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। সভার আলোচনায় তিনি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় আইসিএবির শীর্ষ প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এসময় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে নিরীক্ষা সংস্থা ও নিরীক্ষকদের ভূমিকা ও দায়িত্ব, নিরীক্ষা কার্যক্রমে বিদ্যমান সংকট, প্রতিব্ন্ধকতা ও করনীয়সহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
মত বিনিময় সভায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের আরো দায়িত্বশীল করা ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনয়ন, কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণকে আরো ভালো করতে কোম্পানির সিএফও-দের আরো দায়িত্বশীল করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যথাযথ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশে উচ্চমানের আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষার প্রসার ও বিকাশ সাধন, নিরীক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সততা ও নৈতিক মান নিশ্চিতকরণ, সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিতকরণ, বাজার সংশ্লিষ্টদের জন্য হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিশেষায়িত ও পেশাদার প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ, নিরীক্ষকদের দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন, পুঁজিবাজারে নীতিসহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, পুঁজিবাজারে মনিটরিং জোরদারকরণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সংস্কার ও উন্নয়ন, পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের মূল উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিতকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।
সভার আলোচনায় পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে রক্ষায় করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় আইসিএবির প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে বিএসইসি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও অংশীজনদের সাথে মত বিনিময় করছে। সর্বোপরি, দেশের পুঁজিবাজারের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ও সংকটসমূহ থেকে উত্তরণে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় একটি শক্তিশালি ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করছে বলেও জানানো হয়েছে।