ডলার সংকটের প্রভাব ক্রেডিট কার্ডে

Posted on October 12, 2023

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : বর্তমান সময়ে আবারও ডলার সংকট তুঙ্গে। এই সংকট চলে আসছে গত দেড় বছর ধরে। ডলার সংকটের চাপ রিজার্ভ থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পর্যন্ত পৌছে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ক্রেডিট কার্ডেও। ফলে চলতি বছরের আগস্টে কার্ডের মাধ্যমে দেশের মধ্যে টাকার লেনদেন বেড়েছে। অথচ বিদেশে বাংলাদেশিদের কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যয় কমেছে।

জুলাই মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের মাস জুলাইয়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতর লেনদেনে বেড়েছে ৯৬ কোটি টাকা বা ৪.০৯ শতাংশ।

অপরদিকে আগস্ট মাসে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ কমেছে। এ মাসে খরচ হয় ৪১৮ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৫১১ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে ডলারের ব্যবহার কমেছে ৯৩ কোটি টাকা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) দেশের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ১৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। আলোচ্য এই সময়ের মধ্যে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৩২৪ টাকার। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডে দেশের মধ্যে খরচের প্রবণতাই বেশি দেখা যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানান, সঙ্গে করে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকদের অনেকে কার্ড ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার শাখায় গিয়ে লাইন ধরে লেনদেন করতে বাড়তি সময় লাগে। এছাড়া ব্যাংকিং সময়ের বাইরে যে কোনো লেনদেনের সুবিধার কারণে এখন কার্ড লেনদেনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

এদিকে ক্রেডিট কার্ড সেবাকে জনপ্রিয় করে তুলতে নানা ছাড় ও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রথম বছরে ফ্রি সেবা, নির্দিষ্টসংখ্যক লেনদেনে প্রতি বছর বাড়তি চার্জ মওকুফ, রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কেনাকাটায় বিশেষ ছাড়, হোটেলে থাকা ও খাওয়াসহ নানা অফার। এর ফলে দেশে এখন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়ে সাড়ে ২২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে।

দেশের মধ্যে ব্যবহার করা ক্রেডিট কার্ডের ধরন বিশ্লেষন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি হয়েছে দেশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক লেনদেন হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয়। এছাড়া ১২.৩৪ শতাংশ খুচরা দোকানের ক্ষেত্রে, ৯.১৬ শতাংশ ইউটিলিটি, ৭.৯৭ শতাংশ নগদ অর্থ উত্তোলন, ৫.৯৫ শতাংশ ওষুধ ও ফার্মেসিতে, ৪.৫১ শতাংশ পোশাক কেনাকাটা, ৩.৪৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে ফান্ড ট্রান্সফারে, ৩.৩৭ শতাংশ ট্রান্সপোর্টেশন, ২.১৮ শতাংশ ব্যবসা সেবা এবং ১.০৯ শতাংশ ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন হয়েছে অন্যান্য প্রয়োজনে।

লেনদেনে কার্ডের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিসা কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এ সময়ে। এর পরিমাণ ৭৭.৪৫ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে মাস্টার কার্ড, এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ১৪.০৪৯ শতাংশ। এছাড়া বাকি প্রায় ৮.০৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অন্যান্য কার্ডের মাধ্যমে।

দেশভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ভারতে। এর পরিমাণ ১৭.৬২ শতাংশ, অর্থের হিসাবে যা ৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া লেনদেনে অন্যান্য দেশ হিসাবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬.৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৯.৫১, যুক্তরাজ্যে ৭.৬৯, সিঙ্গাপুরে ৭.৬১, কানাডায় ৬.৭১ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬.৪৯, মালয়েশিয়ায় ৫.৪০, সৌদি আরবে ২.৮৯, নেদারল্যান্ডসে ২.৮১, আয়ারল্যান্ডে ২.৭৩, অস্ট্রেলিয়ায় ২.১৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ১২.০২ শতাংশ।