শত কোটির বেশি ডলার বিক্রির চাপে রিজার্ভে পতন

Posted on October 10, 2023

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। সংকট কাটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৫ মাসের হিসাবে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর ফলে রিজার্ভের পতন অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছিল ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার। এরপরে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিক্রি করা হয় ৩৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ের মধ্যে ডলার সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। সংস্থাটির ৪৭০ কোটি টাকার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে ছাড় দেওয়া হয়। গত জুনের মধ্যে রিজার্ভের মজুত হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী শুরু করার শর্ত ছিল এই ঋণে। বিপিএম ৬ অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের আশেপাশে রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্যন্ত সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ডলার। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবেই চলতি বছরের ৯ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬৯৭ কোটি ডলার। যদিও ২০২১ সালে দেশের রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ ডলার আসার প্রধান দুটি খাত রফতানি ও রেমিট্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে এই খাত দুটিতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি তৈরি হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভে আরও চাপ তৈরি হচ্ছে। ডলারের এ সংকটে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে পণ্যের দাম। বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি আরও চূড়ার দিকে যাচ্ছে। সংকটের মধ্যে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে পারছে না। এতে ভবিষ্যতে সংকট আরও বাড়তে পারে।

এদিকে ডলার সংকট মেটাতে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে, তখনই ডলার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ছে অনেক ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়েও ডলার কারসাজিতে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোয় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গোয়েন্দা সংস্থারসদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয়।

ডলার সংকট যখন চূড়ায় তখন বড় আঘাত করেছে প্রবাসী আয়। কারণ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৪৯১ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময় যার পরিমাণ ছিল ৫৬৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের সেই তুলনায় কমেছে ৭৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। আর আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ভাটা পড়েছে। সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে তার আগের দুই মাসের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৪৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগস্টের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম। আগস্টে রপ্তানি হয়েছিল ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। আর জুলাই মাসে রপ্তানি হয় ৪৫৯ কোটি ডলারের। অর্থাৎ জুলাইয়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।