চালু হলো মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন

Posted on October 15, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ভাঙচুর-হামলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনের কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ৮৮ দিন বন্ধর থাকার পর স্টেশনটি পুনরায় চালু করতে পেরে আনন্দিত কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা। আজ সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করা হয়।

উপদেষ্টা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনটি মেরামত করতে আপাতত খরচ হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। সর্বমোট খরচ হবে প্রায় ১৮ কোটি ৮৬ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে নয়, মেট্রোরেলের ফান্ড থেকে এ টাকা খরচ করা হবে।

মেট্রো স্টেশন আন্দোলনকারী ছাত্ররা ভাঙচুর করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা স্টেশন ভেঙেছে, সিসিটিভি ফুটেজ আইজিপিকে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রো ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রউফ তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে স্টেশনটি পরিচালনা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এর ফলে মিরপুর-১০ স্টেশনটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে।

কাজীপাড়া স্টেশন প্রাথমিকভাবে সংস্কার করে চালু করতে ২২ লাখ টাকা লেগেছে। মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে ব্যয় আরও কিছুটা বেড়েছে। কীভাবে এত দ্রুত অল্প সময়ে ও অল্প খরচে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি চালু করা সম্ভব হয়েছে তা জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ।

তিনি জানান, দেশীয় মার্কেট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোর জন্য কিছু সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। যেসব সরঞ্জাম আমদানি করতে হতো সেগুলোর কিছু কিছু তুলনামূলক কম যাত্রীবহুল স্টেশন থেকে এনে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও মেট্রোরেল ডিপোতে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণের জন্য রাখা কিছু সরঞ্জামও ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, স্টেশনের পুরো ব্যবস্থাপনা নতুন করে না সাজিয়ে আগে তালিকা করা হয়েছে কোন কোন সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কীভাবে এগুলো সংস্কার বা পুনরায় চালু করা যায়। মেট্রোরেলের কিছু স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কম থাকে। যেমন উত্তরা সাউথ, উত্তরা সেন্টার ও বিজয় সরণি। এগুলো যাত্রী কম থাকলেও ২০৩০ সাল লক্ষ্য করে যথাযথ সরঞ্জাম বসানো আছে। ওখান থেকে কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে দেখলাম ছয়টা মেশিন আছে। সেখান থেকে তিনটা নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোর যেসব জিনিস নষ্ট হয়েছে সেগুলো বদল করেছি।

দেশীয় উপায়ে কিছু সরঞ্জাম সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু প্রোডাক্ট, যেমন- কম্পিউটার লোকাল মার্কেট থেকে কিনেছি। মেট্রোরেলে যে গ্লাসগুলো আছে সেগুলো অগ্নিসহনীয়। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আগুনে টিকে থাকতে পারবে। এগুলো ইন্ডিয়া থেকে আনা। সেখানে আমরা নাসিরের টেম্পার গ্লাস এনে লাগিয়েছি। কিন্তু আমাদের স্টেশনে কন্ট্রোল রুম আছে, যেখানে সব সিস্টেম আছে। সেখানে পরবর্তীতে আমরা অগ্নিসহনীয় গ্লাস এনে লাগাবো।

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, স্টেশন সংস্কারের যে টাকা খরচ হয়েছে তা আমরা নতুন সরকারের কাছ থেকে নেব না। আমাদের যে প্রফিট আছে রানিং, আমাদের প্রজেক্টের জন্য আগে থেকে যে বরাদ্দ আছে, সেখান থেকে ব্যয় করবো।

তিনি আরো বলেন, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে দুর্বৃত্তরা মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভাঙচুরকারীরা স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সবকিছু ভাঙচুর করে।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মেট্রোরেল ৩৭ দিন বন্ধ থাকে, গত ২৫ আগস্ট থেকে তা পুনরায় চলাচল শুরু হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন হামলার শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জানিয়েছিল, এই স্টেশনগুলোর ফের চালু করতে এক বছর সময় লাগবে এবং কয়েক শত কোটি টাকা ব্যয় হবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এসে দ্রুত দুটি স্টেশন চালুর ব্যবস্থা করে। এর মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়। আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) মিরপুর-১০ স্টেশন খুলে দেয়া হয়।