প্রবাসী আয় বাড়ায় বাড়ছে রিজার্ভ

Posted on October 12, 2024

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : গত ২ মাস ধরে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভের পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মোট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯৭ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন এক হাজার ৯৮২ কোটি ডলার। গত সপ্তাহে অর্থাৎ ২ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯.৭৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে।

গ্রস রিজার্ভ ও বিপিএম-৬ এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আছে এক হাজার ৪৭১ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের জন্য বেঁধে দেওয়া ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য ১৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার।

দেশে চলমান সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার ঘোষণা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু চাহিদা ঠিক রাখতে গিয়ে প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে চলতি সেপ্টেম্বরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অনেকটা বন্ধ আছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান। ৪/৫টি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারত, সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ৬ মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ১২.৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। তারও আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি করে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নজিরবিহীন অর্থপাচার ও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকার দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে। তখন রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। প‌রে ২০২৩ সা‌লের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ।

এর ৩দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং জুনে তৃতীয় কিস্তির ১.১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। সবমিলিয়ে ৩ কিস্তিতে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭টি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। ঋণচুক্তির চতুর্থ কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের অন্যতম শর্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ সংরক্ষণ রাখতে হবে। সেই হিসেবে আইএমএফের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের জন্য বেঁধে দেওয়া ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য ১৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।