এস আলমের ১২ প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি ৪৯১৪ কোটি টাকা

Posted on October 7, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের আরও ১২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গ্রুপটির যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর সেগুলো হলো- এস আলম স্টিলস, চেমন ইস্পাত, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস এস পাওয়ার, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট, এস আলম প্রোপার্টিজ, এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস, এস আলম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এর আগে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছিল।

আয়কর বা শুল্ক ফাঁকির চেয়ে ভ্যাট ফাঁকি বেশি গুরুতর অপরাধ। কারণ, ভ্যাট আদায় হয় ভোক্তার কাছ থেকে। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া মানে ভোক্তার টাকা নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া।

ভ্যাট বিভাগের পাশাপাশি এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলমসহ তাঁর স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের আয়কর ফাঁকিরও তদন্ত চলছে। এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়কর ফাঁকি দিয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদায়ী সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী ছিল এস আলম গ্রুপ। এস আলম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশকে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে তিনি এসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আয়কর বা শুল্ক ফাঁকির চেয়ে ভ্যাট ফাঁকি বেশি গুরুতর অপরাধ। কারণ, ভ্যাট আদায় হয় ভোক্তার কাছ থেকে। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া মানে ভোক্তার টাকা নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া। এর ফলে দুই ধরনের অপরাধ হয়েছে। প্রথমত সরকারি কোষাগারে প্রাপ্য রাজস্ব জমা পড়েনি। আবার ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

গত ১৯ আগস্ট এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করতে ২০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১০টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত দলের ভ্যাট কর্মকর্তারা।

চগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগরে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার লিমিটেডে ৭৫৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে পটিয়ার শিকলবাহা এলাকার এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস। এই প্রতিষ্ঠানটির ফাঁকির পরিমাণ ২১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাঁশখালীর গন্ডামারার এস এস পাওয়ার ২০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

এ ছাড়া চেমন ইস্পাত ১৪৭ কোটি টাকা, এস আলম স্টিলস ৫৬ কোটি টাকা, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট সাড়ে ২১ কোটি টাকা, এস আলম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ সাড়ে ১০ কোটি টাকা, এস আলম প্রোপার্টিজ ৬ কোটি টাকা, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২ কোটি টাকা এবং এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

এস আলম স্টিল (ইউনিট-২), নিউ এস আলম শুজ অ্যান্ড বার্মিজ, অটোবোর্টস অটোমোবাইলস, প্লাটিনাম স্পিনিং মিলস, সাইনিং এসসেন্ট, গ্র্যান্ড স্পিনিং মিলস, ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওশান রিসোর্টসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে।

এর আগে গত জুন মাসে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পান এনবিআরের ভ্যাট কর্মকর্তারা। এই দুটি প্রতিষ্ঠান হলো চট্টগ্রামের এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল।