খাতা কেড়ে নেওয়ায় শিক্ষককে থাপ্পড়, শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

Posted on October 9, 2023

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় শাস্তির দাবি জানিয়ে ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন করেছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করলে বিদ্যালয়ের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন এবং শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরত পাাঠান। দুপুরের দিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করে।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। রোববার সকাল ১০টায় বাণিজ্য বিভাগের হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার হলের দায়িত্বে ছিলেন দিবা শিফটের বাংলা সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান।

পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা ১১ মিনিটের সময় পরীক্ষার্থী সাইফুল আমিন শীর্ষ অন্যদের কাছ থেকে দেখে লিখছিল। প্রথমে তাকে নির্ধারিত আসন থেকে সরিয়ে সামনের একটি বেঞ্চে বসানো হয়। আবারও পেছনে ঘুরে অন্যের খাতা দেখে লেখছিল সে। এক পর্যায়ে পেছনের বেঞ্চে দুই হাত দিয়ে বসে ছিল সাইফুল।

বিষয়টি দায়িত্বরত শিক্ষকের নজরে এলে তিনি ছাত্রের খাতা কেড়ে নিয়ে যান। এ নিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ধাক্কা দিয়ে ছাত্রকে বেঞ্চে বসতে বলেন শিক্ষক। কয়েক মিনিট তার নির্ধারিত আসনে বসে থাকে। কিছু সময় পর সাইফুল বেঞ্চ থেকে উঠে শিক্ষকের দুই গালে থাপ্পড় মারে। শিক্ষক সাইফুলকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে চলে যান। এ সময় সইফুলও বাইরে যান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমাকে জানালে তিনি ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তারকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সদর সার্কেলর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিছুজ্জামান লালন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান । তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা আছে।

স্থানীয় ও সাবেক ছাত্ররা জানান, তারাও এ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে কখনো তারা বেয়াদবি করেননি। এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শাস্তি ছাড়া কোনো সমাধান নেই।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, ক্লাসে যাওয়ার মতো পরিবেশ চান তারা। ছাত্র এমন আচরণ করবে তা তারা কখনো ভাবেননি। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে সদর থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালে একজন শিক্ষককে এক ছাত্র লাঞ্ছিত করেছে। বিষয়টি আমরা তার অভিভাবক ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি পাশে থাকবেন।

জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাডেমিক বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থা নেবে। দায়ী ব্যক্তিকে চিহিৃত, পরবর্তী করণীয় ও বিষয়গুলো যেভাবে উঠে আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, স্কুল শিক্ষককে লাঞ্চতের ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহরের শহরের শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন করেছে তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিদ রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরাই দাবি জানিয়েছে, এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা আর যেন চুয়াডাঙ্গায় না ঘটে। আমরা আজ তাদের উদ্যোগে পাশে দাড়িয়েছি। আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ নিয়ে এসেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা সারা বাংলাদেশে এটা জানাতে চায়। এই ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া হবে না। সামািজিকভাবে আমরা এতো নিচে নেমে গেছি, এটা থেকে উত্তোরণ দরকার।

সহকারী শিক্ষক শিখা রানী শিল বলেন, শিক্ষেকদের সামাজিক মর্যাদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শাসন কমিয়ে দেয়া, বেত উঠিয়ে দেয়া, পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন করার পরও তাকে বসতে দেয়া, টিসি না দেয়ার কারণে সামজিক অবক্ষয় হচ্ছে। কড়া প্রশাসন আর আমাদের হাতে নেই। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা এই ঘটনার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ