সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই

Posted on October 5, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী ওরফে বি চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ছেলে মাহী বি. চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেদিন তার মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান যে, তার বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজেস ভুগছিলেন। আগেও একাধিকার অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৪ বছর বয়সী বদরুদ্দোজা চৌধুরী বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায়ও ভুগছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।

এর আগে, রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন ছেলে মাহী বি চৌধুরী। তিনি বাবার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। নিজগ্রাম মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।

তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

বি. চৌধুরী একজন কৃতী ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে করেন মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী লন্ডনে অবস্থিত কারফিউ এন্ড এডিনবার্গ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জীবনের সব পরীক্ষাতেই মেধা তালিকায় তাঁর স্থান ছিল প্রথম দিকে।

ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফআরসিপি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফসিপিএস। তিনি রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষ অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ষাটের দশকের শেষের দিকে রোগ বিজ্ঞান নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠানের রেকর্ডঅর্জনকারী সফল উপস্থাপক।
সফল পার্লামেন্টেরিয়ান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী জাতিসংঘে তিনবার বক্তৃতা দেন। তিনি একজন লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, উপস্থাপক এবং সুবক্তা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।

জনাব চৌধুরী রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারও লাভ করেন।

তিনি ১৯৭৭ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের সরকারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী চিকিৎসক থেকে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতে নামেন। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হন। জিয়াউর রহমানের সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ডাকে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

২০০৪ সালের ৮ মে বি. চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ছিল বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সংসার। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় আইনজীবী, ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক। তিনি উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর একমাত্র ছেলে মাহী বি. চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নেতা । তিনি মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।