রং তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা

Posted on October 8, 2023

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাম্বীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের পাল পাড়ায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মন্ডপে মন্ডপে শুরু হয়েছে উৎসবের প্রস্তুতি। আর বাপের বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় রং তুলির আঁচড়ে সাজছেন দেবী দুর্গা।

এদিকে, মাটি, খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি প্রতিমা রঙের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রং-ঢয়ে। পুজা ঘনিয়ে আসায় দেবী দূর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দিন-রাত রং-তুলির কাজ করে যাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।

জানা যায়, এবার শহরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা না থাকলেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। জেলার ৯টি উপজেলায় ৫১৬টি ম-পে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর জেলায় ৫৩৭টি ম-পে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর ২১টি ম-পে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু।

Corporate Sangbad

রবিবার (৮ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রঘাটের পালপাড়ায় প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। পুরুষদের কাজে সাহায্য করছে বাড়ির নারীরাও। তবে দেবী দুর্গাকে নানা রঙে রাঙালেও প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিমা কারিগররা।

পঞ্জিকা মতে আগামী (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিন ব্যাপী এই উৎসবের। এবার দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল ছত্রভঙ্গ অর্থাৎ ( অশুভ) পৃথিবী এবার অনেকটা অস্থির ও বিশৃঙ্খল থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন পুজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।

কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর গুপিনাথ পাল বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪২ বছর যাবৎ এই পেশায় জড়িত রয়েছি। প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিমার মুল্য জানতে চাইলে গুপিনাথ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। গতবারের মুল্যতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা। প্রতিটি প্রতিমা ১৫ হাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে এক সেট।

প্রতিমা তৈরীর শিল্পী রণজিত পাল ও সুভাষ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, খড় ও সুতলি-রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রতিমা তৈরি করে আর্থিক ভাবে লাভ বান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার পূজা ম-পের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রিও কমে গেছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এবার শারদীয় দূর্গাপুজা আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিন ব্যাপী এই উৎসবের। দেবীর এবার আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল অশুভ।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের দিক থেকে আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার প্রত্যেকটি পূজা ম-পে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের উপজেলা কমিটিও কাজ করবে। এবার জেলায় ৫১৬ টি পূজা মন্ডপে আনন্দ উৎসবে পালিত হবে শারদীয় দুর্গা পূজা।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি') সিরাজুল ইসলাম জানান, পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা ম-পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। শারদীয় দুর্গোৎসব এবার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, পূজায় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজাম-পে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও আনছার বাহিনীর সঙ্গেও মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পূজাম-পগুলো নজর দারিতে রাখবে। পাশাপাশি সবকটি পূজা ম-প গোয়েন্দা নজর দারিতে থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ