হরিরামপুরে পদ্মায় অবৈধভাবে চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

Posted on September 22, 2024

সাইফুল ইসলাম তানভীর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর লেছড়াগঞ্জ বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইজারার শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। শর্ত লঙ্ঘন করে দুইদিকে যথাক্রমে একদিকে ৪ কিলোমিটার অপরদিকে ৮ কিলোমিটার দূর থেকে ১০-১১টি ড্রেজার দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী ফসলি জমির ক্ষতিসহ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। কয়েকমাস ধরে অবৈধ এই বালু উত্তোলন চললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

জানা যায়, হরিরামপুরে দ্বিতীয়বারের মতো বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। গত ৩ এপিলের দরপত্র অনুযায়ী বাংলা ১৪৩১ সালের জন্য লেছড়াগঞ্জ বালুমহাল ইজারার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা পেয়েছে এশিয়ান বিল্ডার্স। যার কর্ণধার জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লব। দরপত্র অনুযায়ী লেছড়াগঞ্জ মৌজার দিয়ারা জরিপ ১ নম্বর খতিয়ানের ৩০০১ দাগের ৩২.৪৭ একর জমি ইজারাভূক্ত। গত ১ জুন বালুমহালের নির্ধারিত সীমানা বুঝিয়ে দিয়ে কাগজপত্র হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই চলছে বালু উত্তোলন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের গৌরীবরদিয়া মৌজায় বিসমিল্লাহ্ ইঞ্জি: লোড ড্রেজার ও এমবি আল মোজাদ্দেদ লোড ড্রেজিং প্রকল্প (এম-০১-২৯৭০) নামের দুুইটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। যা বালুমহালের নির্ধারিত সীমানা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। জানতে চাইলে ড্রেজারে থাকা সজল জানান, এটা হরিরামপুর বালুমহালের ড্রেজার। তিনি বালুমহাল বরাদ্দের কাগজও দেখান।

ড্রেজারে থাকা আরও দুই শ্রমিক বলেন, মো. সাগর মোল্লার নেতৃত্বে এখানে বালু তোলা হচ্ছে। তার সাথে যোগাযোগ করেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাগর মোল্লা বলেন, আমার নেতৃত্বে নয়, বালুমহাল ইজারাদার আলী আকবর খান ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন। আমি তার কাছে থেকে বালু কিনে নিচ্ছি। নির্ধারিত সিমানার বাইরে ড্রেজার চলার বিষয়ে বলেন এটা ইজারাদারের বিষয়।

সেলিমপুর চরের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, যে জায়গায় ড্রেজার চলছে সেটি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে পড়েছে। এর আগে আমাদের এলাকায় ড্রেজার চলেছে। পরে এলাকার লোকজন বাঁধা দেওয়ার কারণে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সীমানায় গিয়েছে। আজও আমাদের গ্রামের লোকজন দল বেঁধে এসেছিল বাঁধা দিতে কিন্তু দূরে যাওয়ার কারণে বাঁধা দেয়নি। প্রতিবছরই আমাদের চর ভাঙে। আগে চরে থেকে ওপাড় যেতে ট্রলারে ২০-২৫ মিনিট লাগতো কিন্তু এখন প্রায় ৫০ মিনিট লাগে। এই পরিমাণ জমি নদীতে ভেঙে গেছে। এইভাবে বালু তুললে ভাঙন আরও বাড়বে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের গৌরীবরদিয়া এলাকায় ড্রেজার চলার বিষয়টি নজরে এলে গত বৃহস্পতিবার আমি তাদের নিষেধ করেছি। পাশাপাশি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

অপরদিকে ধুলশুড়া ইউনিয়নের আউলিয়ানগর এলাকায় পদ্মা নদীতে স্বপ্নের বাংলা লোড ড্রেজার, মদিনার পথে লোড ড্রেজার নামের দুইটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সেটিও বালুমহালের নির্ধারিত সীমানা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে। এছাড়াও আন্ধারমানিক ঘাটের অদূরে চরের পাশে থেকে ৭টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সেগুলোও বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধুলশুড়া এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে ধুলশুড়া ইউনিয়নের আউলিয়ানগর এলাকায় ৪-৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়েছে। এখনও সেখানে দুইটি ড্রেজার চলছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইজারাদার এশিয়ান বিল্ডার্সের মালিক আবিদ হাসান বিপ্লব বলেন, কাগজপত্রে আমার নাম থাকলেও বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন আজিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আকবর খান। তিনি আমার লাইসেন্সে বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। টাকা-পয়সা সব তারই। এটা প্রশাসনসহ সবাই জানে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আজিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আকবর খান বলেন, আমরা লেছড়াগঞ্জে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। টোল মানি দেই লেছড়াগঞ্জের। বালু কাটায় যদি একটু এদিক-ওদিক হয়ে থাকে সেটা এসিল্যান্ড বুঝবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহরিয়ার আশরাফ বলেন, অভিযানে যেতে আমাদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে থাকতে হয়। আমরা ফোর্স চাচ্ছি। যখন আমাদের প্রপারলি প্রোভাইড করবে আমরা অভিযানে যাব। এছাড়া, ধুলশুড়া ও কাঞ্চনপুরে আমার লোক পাঠাবো, খোঁজ নিয়ে দেখছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।