ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপ, ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

Posted on August 31, 2024

অনলাইন ডেস্ক: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্যানে লাশের স্তূপের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। লোমহর্ষক এ ভিডিও ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত কয়েকজন ব্যক্তির। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পরে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যান জানায়, ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপের ঘটনাটি আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকার। তবে, তাদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকগুলো মরদেহ স্তূপ করে রাখা হয়েছে একটি ভ্যানে। পাশাপাশি আরেকটি মরদেহ ভ্যানে তুলে দিচ্ছে পুলিশ। পরে একটি পোস্টার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে ফেলা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন পুলিশকে আশপাশে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখা যায়। যদিও পুলিশের জ্যাকেট পরে যারা ছিলেন তারা আসলে পুলিশ ছিলেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেকের। তাদের একজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনিসহ ভিডিওচিত্রে থাকা পুলিশের সদস্যরা।

রিউমার স্ক্যান জানায়, নিথর দেহের স্তূপের বহুল আলোচিত ভিডিওটি আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। ৫ আগস্ট বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন দুইজন দাবি করেন, ভিডিওর দেয়ালে যার পোস্টার দেখা যায় তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভূঁইয়া।

জানা গেছে, দেয়ালের এই পোস্টার এখন আর নেই। ৫ অগাস্টের পরপরই সব দেয়ালে নতুন রং করা হয়েছে।

অধস্তন কর্মকর্তার ছবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ঢাকা উত্তর (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব ছবিটি আরাফাতের বলে নিশ্চিত করেন। আরাফাতের গ্ৰামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে সে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন উপরে আল্লাহ নিচে আপনারা। সেদিন আমরা কোনো গুলি করিনি। অলিগলিতে হাজারো ছাত্র-জনতা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল। তবে আমরা গুলি করিনি।’

সেদিন কার নির্দেশে ডিবির টিম আশুলিয়ায় দায়িত্বে ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বলেন, ‘ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফী স্যারের নির্দেশে সেদিন আমরা আশুলিয়ায় ছিলাম। আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলাম। নইলে আমাদেরকেও মরতে হতো।’

৫ আগস্ট দুপুরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এবং তার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার খবরে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আশুলিয়া থানা মুখে অগ্রসর হলে নির্বিচারে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে সেই লাশগুলো একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে একটি পিকআপে স্থানান্তর করার পরে গণহত্যার চিত্র মুছে ফেলতে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

পুড়িয়ে দেওয়া হতভাগ্যদের মধ্যে ছিলেন সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া স্কুলছাত্র আস-সাবুর (১৬)।

পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানায় গণহত্যার দিনে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের টিমের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

গণহত্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিডিওচিত্রে থাকা ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সরকারি মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, পুলিশের গণহত্যার চিত্রটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যার কারণে সেই গণহত্যার পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে রোষানলের শিকার হয়ে আশুলিয়ায় প্রাণ হারাতে হয় ঢাকা জেলা ডিএসবির আশুলিয়া জোনে কর্মরত এএসআই সোহেল রানা ও এএসআই রাজু আহমেদ এবং রাজধানীর মালিবাগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই রফিকুল ইসলামকে।

এর মধ্যে এএসআই রাজুর মরদেহ আগুন ধরিয়ে দগ্ধ হওয়ার পর থানা সংলগ্ন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ফুটওভারব্রিজে এএসআই রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট নিহত এএসআই মো. সোহেল রানার স্ত্রী মোছা. রেশমা পারভীন ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাব্বি আক্তার পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আশুলিয়া থানায়।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে গুলি চালায় পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে গত ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া যায়। এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যান। এমপি মন্ত্রীদের কেউ বিদেশ পালিয়ে গেছেন, কেউ দেশের আত্মগোপনে রয়েছেন আবার কেউ গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন।