লাশ দাফনের আগেই অভিযুক্ত চিকিৎসকের জামিন: বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচী 'জাস্টিস ফর শিমুল'

Posted on August 25, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক : নাকের সেপ্টোপ্লাস্টি সার্জারি করতে গিয়ে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া চিকিৎসক ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত সকলের শাস্তির দাবিতে শনিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৭ দফা দাবিতে 'জাস্টিস ফর শিমুল' ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। সেখানে অংশ নেন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা,সহকর্মীরা এবং শত শত সাধারণ জনতা।

নাকের সাধারণ একটি সার্জারি করতে গিয়ে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলাদেশ কর্পোরেট সেক্টরের আইকন, অটবি ফার্নিচার কোম্পানির সাবেক জেনারেল ম্যানেজার, এসিআই গ্রুপের সাবেক ডিরেক্টের এবং মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সম্মানিত নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুল।

ঢাকার গ্রিনরোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার কারণে এই মৃত্যুর প্রতিবাদে গত ২১ আগস্ট বাদী হয়ে মৃতের ভাগ্নে রিয়াজ ইসলাম কলাবাগান থানায় ডাক্তার জাহির আল-আমীনকে প্রধাণ আসামী করে মোট চারজনের নামে মামলা দায়ের করেন এবং ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার আগেই আসামীকে জামিন দেওয়া হলে নিহতের স্বজন, সহকর্মীরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর প্রতিবাদে ২৪শে সেপ্টেম্বর এই অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়।

যেই ৭ দফা দাবি জানানো হয় তা হলো-

১. সার্জন প্রফেসর ডা. জাহের আল-আমীন ও এনেস্থেশিয়ান ডা. ইফতেখার এর গাফেলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে যার সকল দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারকে গ্রহণ করতে হবে।

২. কলাবাগান থানার ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির ও নিউমার্কেট জোনের অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার রাফায়েতের যোগসাজেশে রিমান্ডের প্রেয়ার দেওয়া হয়নি এবং আসামী পরের দিনই জামিন পেয়েছে। উল্লেখিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

৩. অভিযুক্ত চিকিৎসক যেন তার সংশ্লিষ্ট সহকর্মী দ্বারা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জালিয়াতি করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. হাসপাতালের কার্যক্রম মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধীদপ্তর কর্তৃক স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে যেন ভবিষ্যতে অন্যকোন পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

৫. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৬. অভিযুক্ত সার্জন প্রফেসর ডা. জাহের আল-আমীন এবং এনেস্থেশিয়ান ডা. ইফতেখার সনদ বি.এম.ডি.সি কর্তৃক স্থায়ীভাবে বাতিল করতে হবে এবং ডাক্তারের দৃষ্টান্তমৃলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বাংলাদেশের সকল প্রাইভেট হাসপাতালের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধীদপ্তর কর্তৃক মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে এবং যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল চিকিৎসা প্রদানে অনুপোযোগী সেই হাসপাতালগুলোর পরিচালনা লাইসেন্স দ্রুত বাতিল করতে হবে।

কলাবাগান থানার মামলার নম্বরটি ২(৮) ২০২৪। মামলা করার সময় আসামিদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেজন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবিরকে বাদী পক্ষ থেকে বারবার মামলাটির ধারা পরিবর্তন করে দেওয়ার অনুরোধ করলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে ধারা পরিবর্তন না করে মামলাটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪ এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী রুজু করেন। উক্ত ধারা অনুযায়ী একজন আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর এবং সর্বনিন্ম ২ বছর হয় যা অত্যন্ত প্রহসনমূলক এবং সুষ্ঠ বিচারের পরিপন্থী।

উল্লেখ্য, উক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে অতীতেও ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে তিনি এক মহিলা রোগীর কানের ভুল সার্জারির করার কারণে তার চিকিৎসা করার বি.এম.ডি.সি কর্তৃক লাইসেন্স এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল যা এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এমন একজন ডাক্তার কি করে উক্ত হাসপাতালে ডা. হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ এবং কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজন, চিকিৎসারত রোগী ও তাদের স্বজনরা।