ডলারের বিপরীতে আরও কমতে পারে টাকার মান

Posted on October 4, 2023

অর্থ-বাণিজ্য: যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের কারেন্সি টাকার দাম আরও কমতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ অধিক বাড়তে পারে। 

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপক কমেছে। বিদায়ী সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে নিম্নমুখী হয়েছে। বিগত ৪১ মাসের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। একই সময়ে রপ্তানি আয়েও বড় পতন ঘটেছে। কোনও খাতেও মাসিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে ইতোমধ্যে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের ওপর চাপ বেড়েছে। 

আরও পড়ুন-জেনে নিন কোন দেশের মুদ্রা আজকে বাংলা টাকায় কত

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। ফলে এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। তাতে সামনের মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। 

গত ২ বছরে টাকার মান কমেছে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। তবে আন্তঃব্যাংক ও খোলাবাজারে তা আরও বেশি দরে বিকোচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি ১১৭ টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে আরও নিম্নমুখী হতে পারে বাংলাদেশি মুদ্রা। প্রধান ৬ বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতেই টাকার অবনমন ঘটতে পারে। কারণ, খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি। ফলে কিছু লাভের আশায় হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ব্যাংকিং চ্যানেলে কম প্রেরণ করছেন তারা। এতে স্পষ্ট, শিগগিরই বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এতে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে ডলারে মূল্যমান ঊর্ধ্বমুখী হয়। সেই টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতেও কাজ হচ্ছে না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, রিজার্ভ যেন আর না কমে সেই বিষয়ে নজর দিতে হবে বাংলাদেশে ব্যাংককে। অন্যথায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই অর্থনীতিতে এখন বড় সংস্কার আনতে চাইবে না সরকার। ফলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে আপাতত স্বল্পমেয়াদী কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ক্রমন্বয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। তবে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সেটা আর কমতে দেয়া যাবে না। এজন্য রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি উৎস থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করতে হবে। রাজস্ব আহরণ, কর-জিডিপি বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।

খবর: চ্যানেল ২৪

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ