গাজীপুরে ভুয়া নার্স ও মিডওয়াইফ নির্মূলে অভিযান পরিচালনার দাবিতে মানববন্ধন

Posted on August 21, 2024

গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অনিবন্ধিত, ভুয়া নার্স ও মিডওয়াইফ নির্মূলে অভিযান পরিচালনার দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে ‘গাজীপুরের সর্বস্তরের পেশাপ্রেমী নার্স সমাজ’ এর ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।

নার্সরা জানান, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে নার্সিং সেবায় অনেক অনিবন্ধিত, ভুয়া ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কল-কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নার্সিং সেবা প্রদান করে আসছে। বিভিন্ন সময় এসব ভুয়া নার্স ও মিডওয়াইফদের নানা অদক্ষতার কারণে আমাদের নিবন্ধন প্রাপ্ত নার্স বা মিডওয়াইফদের সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানি হতে হয়। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নার্সিং খাত। যে কারণে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চলমান রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে এই খাতেও আমুল সংস্কার প্রয়োজন।

স্মারক লিপিতে নার্স সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে নার্সিং সমাজ স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সিং সেবা খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন-২০১৬ অনুযায়ী পেশাগত নিবন্ধন ব্যাতীত কোনো বাক্তি নার্সিং সেবা বা নিজেকে নার্স হিসেবে দাবি করতে পারবে না; যদি দাবি করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এই আইনকে অমান্য করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো ভুয়া নিবন্ধনহীন ব্যক্তিরা অনায়াসে নার্স কিংবা মিডওয়াইফ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব ভুয়া নার্স ও মিডওয়াইফদের নানা অদক্ষতার কারণে আমাদের নিবন্ধন প্রাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফদের সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানি হতে হয়। এছাড়াও তাদেরকে হাসপাতালের মালিকরা নাম মাত্র বেতনে নিয়োগ দেন। ফলে বিএনএমসি কর্তৃক নিবন্ধিত নার্সরা বেসরকারি হাসপাতাল এ যথাযথ বেতন ও সম্মান পাচ্ছেন না। হাসপাতাল মালিকগণ অদক্ষ ও ভুয়া নার্স দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেবা দিয়ে জনগনের সাথে চরম প্রতারণা করছে, যা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য চরম হুমকি।

স্মারক লিপিতে আরও বলা হয়, গাজীপুর বাংলাদেশের একটি বড় শিল্পাঞ্চলীয় এলাকা। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে মেডিকেল সেন্টার ও স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র অত্যাবশকীয় থাকার কথা থাকলেও বেশ কিছু ফ্যাক্টরীগুলোতে রয়েছে শুধু নামমাত্র। মেডিকেল সেন্টারগুলোতে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অষ্টম অধ্যায়ে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য বিধি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে যে সকল প্রতিষ্ঠানে সাধারণত তিনশ বা ততোধিক শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন সে সকল প্রতিষ্ঠানে বিধি দ্বারা নির্ধারিত মাপের ও যন্ত্রপাতি সজ্জিত অথবা অন্যান্য সুবিধা সম্বলিত ডিসপেনসারীসহ একটি রোগী কক্ষ থাকিবে, এবং উক্ত কক্ষটি বিধি দ্বারা নির্ধারিত চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফের দায়িত্বে থাকিবে, এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঁচ হাজার বা ততোধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন সেই সকল প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিক বা মালিকগণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায় একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে অনিবন্ধিত নার্স (নামধারী) ও একজন বা দুইজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট দ্বারা মেডিকেল সেন্টারগুলো পরিচালিত হচ্ছে যা বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর পরিপন্থি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এর নীতি বহির্ভূত।

স্মারকলিপিতে নার্স সমাজের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সিং সেবার সংস্কার এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন' ২০১৬ এর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ভুয়া নার্স ও মিডওয়াইফ নির্মূল অভিযান পরিচালনার জন্য সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করার দাবিও জানান তারা।

স্মারকলিপিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এবং জেলা প্রশাসক করা হবে বলেও জানায় নার্স সমাজের নেতৃবৃন্দ। মানবন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন-মোঃ মোখলেছুর রহমান, আবুল ফজল, ফারহাদ হুসাইন, মোঃ লুৎফর রহমান, সাকিল আহমেদসহ নার্স সমাজের প্রতিনিধিগণ।